আল্লাহ বলেছেনঃ
‘তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে।
নিচুস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর এবং তুমি উদাসীনদের
দলভুক্ত হইয়ো না। (সূরা আ'রাফঃ ২০৫)
* এই (সন্ধ্যা হলো আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়।
তিনি আরও বলেছেনঃ
‘সূর্যের উদয় ও অস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর”।
(সূরা ত্বাহাঃ ১৩০)
রাসূল সাঃ কে সম্বোধন করে আল্লাহ বলতেছে "আপনি বলিয়া দিন, যদি তোমরা দোয়া না কর তবে আমার রবও তোমাদের কোন পরওয়া করিবেন না ।
(সূরা ফুরকানঃ ৭৭)
'তোমরা আমাকে স্মরণ রাখ আমি তোমাদের কে স্মরণ রাখিব ।
অর্থাৎ দুনিয়া ও আখেরাতে আমার দান ও এহসান তোমাদের সঙ্গে থাকিবে ।
(সূরা বাকারাহঃ ১৫২)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি তার রবের যিকির (স্মরণ) করে, আর যে ব্যক্তি তার রবের যিকির করে না- তারা যেন জীবিত আর মৃত” ।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন
"আমি কি তোমাদেরকে তা জানাবো না— আমলের মধ্যে যা সর্বোত্তম, তোমাদের মালিক (আল্লাহর) কাছে যা অত্যন্ত পবিত্র, তোমাদের জন্য যা অধিক মর্যাদা বৃদ্ধিকারী(আল্লাহর পথে)
সোনা-রূপা ব্যয় করার তুলনায় যা তোমাদের জন্য উত্তম এবং তোমরা তোমাদের শক্রদের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে হত্যা এবং তারা তোমাদের হত্যা করার চাইতেও অধিকতর শ্ৰেষ্ঠ?
সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই হ্যাঁ।
তিনি বললেন, "আল্লাহু তা'আলার যিকির"।
ইবনে মাজা” ২/৩১৬সহীহ ।
কুরআনে বর্ণিত আছে আল্লাহ মানুষের উপর কিছুই চাপিয়ে দেন না, মানুষের উপর যত বালা মুসিবত আসে তা কৃতকর্মের ফল ।
সূরা আর রুম এর ৪১ নং আয়াত এ আল্লাহ বলতেছে ।
ظَہَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَہُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ ﴿۴۱﴾ ।
অর্থঃ স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি ভোগ করাতে চান, যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।
বিপদ দেয়ার উদ্দেশই মানুষ যেনো আল্লাহর দিকে ফিরে, কিন্তু জ্ঞানিরা ছাড়া অন্যরা এটা অনুভব করতে পারেনা ।
দোয়া মানেই এস্তেগফার, তাওবা, সাহায্য চাওয়া, কিছু দোয়া আছে যা পড়লে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন, আল্লাহর ওয়াদা আমলের সাথে ।
প্রাণপন চেষ্টা করুন এই দুআ গুলো মুখস্থ করে প্রতিদিন আমল করার জন্যঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ থেকে যিকিরের জন্য ৩টি বিশেষ সময় পাওয়া যায়। আর তা হলোঃ
১. সকালে (ফযরের পরে)।
২. সন্ধ্যায় (আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত)।
৩. ঘুমানোর আগে।
রাতে সকাল ও সন্ধ্যার যিকির থেকে কয়েকটি বিশেষ দুআ
যেইগুলো ছোট কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও
প্রয়োজনীয়, অশেষ সওয়াব ও মর্যাদার
অধিকারী তার বর্ণনা দেওয়া হলো।
দুয়াগুলো মুখস্থ না হওয়া পর্যন্ত দেখে দেখে পড়া যাবে, নোটে কপি করে রেখে পড়তে পারেন! কোনো সমস্যা নাই। এই দুয়াগুলো করা সুন্নত বা ফরয নয়। তবে
চেষ্টা করা উচিত, সবার নিজেদের সময় ও সাধ্য অনুযায়ী যতগুলো দোয়া সম্ভব হয় তার উপর আমল করা । যার পক্ষে
যগুলো সম্ভব ও ভালো লাগে। কারন দোয়ার তো অভাব নেই । মা-বোনেরা মাসিক ঋতু থাকা অবস্থাতেও এই দোয়াগুলো পড়বেন, কোনো বাঁধা নাই।
-এতো দুআ পড়ার সময় কোথায়??
এই দুআ গুলো পড়তে খুব অল্প সময় লাগবে। মোটামুটি ৫-৭ মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে। সর্বোচ্চ নাহয় সকালে ১০ আর বিকালে ১০, মোট ২০ মিনিট সময়ই ব্যয় করলেন আল্লাহর রাস্তায়। সর্বোত্তম হয় আপনি যদি সালাতের পরপর মুসাল্লাতে বসেই দোয়াগুলো পড়ে নেন। এতে আপনি বেশি আন্তরিকতা ও মনোযোগের সাথে দুআ গুলো পড়তে পারবেন । আর যতক্ষণ মসজিদে বসে থাকবেন, ফেরেশতারা আপনার
জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকবে। আর যদি আপনার ব্যস্ততা একটু বেশি হয়ে থাকে, ফযর ও আসর সালাত মসজিদে পড়ে বাসায় আসতে আসতে পড়ে নিতে পারেন। মা-বোনদের ঘরের
ছোটখাট কাজ যাতে মনোযোগ নষ্ট হয় না, সেইগুলো করার সময়ও দোয়াগুলো পড়তে পারেন।
দোয়াগুলো কঠিন ?
সত্যি কথা বলতে ২-১ টা দোয়া যারা আরবিতে এক্সপার্ট না তাদের জন্য একটু কঠিন লাগতে পারে। এমনকি আমার কাছেও প্রথম প্রথম একটু কঠিন মনে হতো, কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনি যদি দোয়াগুলো কষ্ট করে একবার মুখস্থ করে নিতে
পারেন, এর পরে সারা জীবন প্রত্যেকদিন এইগুলো পড়তে পারবেন।
ইংশাআল্লাহ বিইজনিল্লাহ, আপনার যেইদিন মৃত্যু হবে সেই দিন যদি আপনি ‘সাইয়্যিদুল ইসতিগফার পড়ে থাকেন, ইংশাআল্লাহ আপনি জান্নাতে যাবেন। এটা সহ এমন দু'আ আছে যা আপনাকে অনেক বিপদ আপদ, এক্সিডেন্ট ও দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত চিন্তা ভাবনা থেকে মুক্তি দিবে। এতোবড়
“আল্লাহর রহমত” পাওয়ার জন্য আপনি সামান্য মুখস্থ করার এই কষ্টটুকু করতে পারবেন না?
!কিভাবে মুখস্থ করবেন??
প্রথমে যেকোনো একটা দোয়া (যেটা বেশি দরকারী/যেটা বেশি।
ভালো লাগে) কয়েকবার শুধু পড়বেন আরবীতে (পড়তে কষ্ট হলে বাংলা উচ্চারণ থেকে সাহায্য নেবেন, অথবা বারবার অডিও শুনতে পারেন। নেটে অনেক অডিও পাবেন, চাইলে আমাকে মেসেজ করলেও আমি দোয়ার অডিও দিয়ে দিবো । এইভাবে কয়েকবার পড়াশোনার পরে যখন, দোয়াটা পড়া সহজ হয়ে যাবে তখন মুখস্থ করা শুরু
করবেন। দোয়াটা কে কয়েকটা সুবিধাজনক অংশে ভাগ করবেন। আর একটা একটা অংশ বারবার দেখে ও না দেখে পড়ে মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন। এইভাবে বেশ কয়েকবার
চেষ্টা করে না দেখে কয়েকবার বলতে পারলে অর্থাৎ মুখস্থ হলে পরের অংশ মুখস্থ করা শুরু করবেন। একদিনে না
পারলে ২-৩ দিন বা এক সপ্তাহেও যদি আপনি একটা দোয়া মুখস্থ করতে পারেন তবুও ভালো।
***সকাল ও সন্ধ্যার আমল ১- সাইয়িদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা
প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ দুআঃ
১ বার
জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চিত গ্যারান্টি কে পেতে চান?
“সায়িদুল ইস্তিগফার” বা "ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দুয়া” নামে
একটা দুয়া আছে -
আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে কেউ যদি
প্রতিদিন সকাল ফযরের পরে) ও সন্ধ্যায় (আসর বা
মাগরিবের পরে) পড়ে – আর সে ঐদিন মারা যায় – ইন শা'আল্লাহ সে জান্নাতে যাবে। এই গ্যারান্টি দিয়ে গেছেন স্বয়ং
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)। (বুখারী৫/৪৬৬)তিরমিযী/ আবু দাউদ/ নাসাঈ ।
দোয়াটা পাবেন হিসনুল মুসলিম বইয়ের ১২৭ নাম্বার পৃষ্ঠাতে।
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা
খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুক, ওয়া আনাআ'লা আহদিকা
ওয়াওয়াদিকা মাস্তাতোয়াত, আউযুবিকা মিন শাররি মা
ছানাআ’ত আবু-উ-লাকা বিনি'মাতিকা আলায়্যা ওয়া-আবু-
বি-যামবি, ফাগফিরলীফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লা আনতা ।
হঠাৎ অনাকাংখিত বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া, যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে । অনাকাংখিত যে কোন বিপদ ই মানুষের জন্য একটা খারাপ ব্যাপার । হোক সেটা ধর্ষণে মত জগণ্য জিনিস ।
হুযুর(সাঃ) বলেন কেউ যদি এই দোয়া সকালে তিনবার পড়ে সন্ধা পর্যন্ত কোন মুসিবত তার উপর আসবেনা , সন্ধায় পরলে সকাল পর্যন্ত মুসিবত আসবেনা ।
(আবু দাউদ, তিরমিযী ৩৩৮৮/ ইবনে মাজাহ ৩৮৬৯/ মুসনাদে আহমাদ ৪৮৮/৫২৯/ হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্টা ১৩৮/
মুন্তাখাব হাদীসঃ এলেম ও জিকির অধ্যায়, পৃষ্ঠাঃ ৪৬৭ ।
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي
الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
অর্থঃ আমি সেই আল্লাহর নামে শুরু করেছি, যার নামে শুরু করলে আসমান জমিনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারেনা । প্রকৃতপক্ষে তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানি ।
উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-য়াদুররু মাআসমিহী শাইউন্ ফিল্ আরদি ওয়ালা ফিস্ সামা... ওয়াহুওয়াস সামীউল আলীম । (তিনবার)
-ট্যুরে গেলেন, জঙ্গলে গেলেন, সাপে কামড় দিলো বা বিষাক্ত বা ভয়ানক কোন প্রাণী আক্রমন করলো, তখন কি করবেন ?
হুযুর (সাঃ) বলেন যে ব্যাক্তি সকাল সন্ধায় এই দোয়া তিনবার পড়বে কোন বিষ তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। হযরত সুহাইল (রাযিঃ) বলেন আমার পরিবারের লোকেরা এই দোয়া মুখস্থ করে রেখেছিলো, প্রতি রাতে পড়ে নিতো । এক রাত্রে এক মেয়েকে কোন বিষাক্ত প্রাণী দংশন করলে সে কোন প্রকার কষ্ট অনুভব করেনাই ।
(তিরমিযী, দোয়ার অধ্যায়, ৩৬৫৪) মুসলিম/আবু দাউদ)
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণঃ আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তাম্মাতি মিনশাররি মা-খলাক । (তিনবার)
আজ অনেক বিষয় তুলে ধরেছি, বড় হয়ে যাওয়ার আশাংকায় আপতত তিনটা দিলাম, সামনের পর্বগুলো তে আরো গুরুত্তপূর্ণ বিপদ মুক্তির দোয়া থাকবে ।
বিঃদ্রঃ যারা পরবেন তার মদ, গুন্না, মাখরাজের প্রতি বিশেষ খেয়াল রেখে পড়বেন, বাংলা উচ্চরন সহীহ শুদ্ধ না, এতে অর্থ বীপরিত হওয়ার আশংকা থাকে ।
No comments:
Post a Comment
We will tell you the answer. Thank You .