ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত
আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
زكاة عروض التجارة(باللغة البنغالية)
এ প্রবন্ধে
ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পাঠক এতে জানতে পারবে
ব্যবসায়িক পণ্য,
ব্যক্তি ব্যবহৃত সম্পদ ও ব্যবসায়িক সম্পদের মধ্যে
পার্থক্য, ব্যবসায়িক
পণ্যে যাকাত ফরয হওয়ার শর্তাবলী, ব্যবসায়িক সম্পদ ঋণমুক্ত হওয়ার নিয়ম, ব্যবসায়িক
পণ্যে যাকাতের পরিমাণ কত, ব্যবসায়ী কীভাবে ব্যবসায়িক পণ্য থেকে
যাকাত নির্ধারণ করবে, ব্যবসায়ী তার পণ্যের কোন সময়ের মূল্য
নির্ধারণ করবেন,
সরাসরি পণ্যদ্রব্য থেকে নাকি তার মূল্যমান থেকে যাকাত প্রদান করা
হবে এবং ব্যবসায়ির
হারাম মালের যাকাত
কীভাবে দিবে?
ব্যবসায়িক
পণ্যের যাকাত
যাকাত
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। সালাতের পরেই যাকাতের স্থান। ইসলাম ব্যবসা-বানিজ্য
হালাল করেছে আর সুদকে হারাম করেছে। ব্যবসায়ে অর্জিত সম্পদের ওপর
নির্ধারিত হারে যাকাত আদায় করতে হয়। নিম্নে কোন কোন ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাত আদায়
করতে হবে ও কোন কোন সম্পদে যাকাত আদায় করতে হবে না এবং এর পরিমাণ কত সে সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যাকাত
পরিচিতি:
শাব্দিক অর্থে যাকাত হলো পবিত্র
হওয়া, মর্যাদা পাওয়া, বৃদ্ধি হওয়া, বর্ধিত হওয়া ও বরকতময় হওয়া ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থে:
নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে নিসাব পরিমাণ সম্পদ
থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফরয সম্পদ যাকাতের নির্ধারিত হকদারকে সাওয়াবের নিয়তসহ
প্রদান করাকে যাকাত বলে।
ব্যবসায়িক পণ্য কী?
যেসব
সম্পদ বিদেশে থেকে আমদানি বা বিদেশে রপ্তানি বা স্থানীয় বাজারে ব্যবসার (লাভের)
উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় করা হয় তাকে ব্যবসায়িক পণ্য বলে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত
সব ধরণের সম্পদই ব্যবসায়িক সম্পদ হতে পারে। যেমন জায়গা-জমি (স্থাবর সম্পদ),
ঘর-বাড়ি, খাদ্যদ্রব্য, কৃষিপণ্য, চতুষ্পদ প্রাণী, যন্ত্রপাতি, গাড়ি ইত্যাদি। এসব
সম্পদ একক মালিকানাধীন হতে পারে বা একাধিক মালিকানাভুক্ত হতে পারে।
ব্যক্তি
ব্যবহৃত
সম্পদ
ও
ব্যবসায়িক
সম্পদের
মধ্যে
পার্থক্য:
যেসব
সম্পদ কোনো ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত সঞ্চয় ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত
করে রাখে, ব্যবসা করে লাভের উদ্দেশ্যে ক্রয় করে না তা ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহৃত
সম্পদ বলে গণ্য হবে এবং এতে যাকাত আসবে না। এসব সম্পদের মধ্যে ধর্তব্য হবে তার
বসবাসের জায়গা, ঘর-বাড়ি ও ব্যবসার ব্যবহৃত মূল জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতি। এসব
জিনিস ব্যবসায়িক বা ফ্যাক্টরির মালিক তার ব্যবসার জিনিসপত্র সংরক্ষণ করার নিয়তে
ক্রয় করে থাকেন। এগুলো উৎপাদনের যন্ত্রপাতি হিসেবে গণ্য। যেমন, ব্যবসায় ব্যবহৃত
যন্ত্রপাতি, ফ্যাক্টরির ভবন, দোকান-পাটের জায়গা, গাড়ি, খাদ্যদ্রব্য, যেসব জায়গা
ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় নি, ব্যবসায় ব্যবহৃত পাত্র, গোলাঘর, শো-রুমে
ব্যবহৃত শেলফ, চেয়ার, টেবিল, ফার্নিচার ইত্যাদি ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে ধর্তব্য হবে
না। এসব সম্পদ ব্যবসায়ে ব্যবহৃত স্থির মূলসম্পদ, এগুলো যাকাতের সম্পদের মধ্যে ধরা
হবে না। তাই এতে যাকাত ফরয হবে না।
অন্যদিকে ব্যবসায়িক সম্পদ হলো যা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য হিসেবে অথবা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী এগুলোকে চিহ্নিত করা হবে। অর্থাৎ ব্যবসায়ী বা ফ্যাক্টরির মালিক পণ্যটি ক্রয় করার সময়ই ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করেছেন। যেমন, পণ্যসামগ্রী, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, গাড়ি, জায়গা-জমি ইত্যাদি যা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়েছে। এতে যাকাত ফরয হওয়ার শর্তাবলী পূর্ণ হলে যাকাত ফরয হবে।
ব্যবসায়িক
সম্পদে
যাকাত
ফরয
হওয়ার
দলীল:
অন্যান্য
সম্পদের মালিকের মতোই ব্যবসায়ীর ওপরও যাকাত ফরয হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ
وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ ٢٦٧﴾ [البقرة: ٢٦٧]
“হে মুমিনগণ, তোমরা
ব্যয় কর উত্তম বস্তু, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমরা
জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে”। [সূরা আল-বাকারাহ,
আয়াত: ২৬৭] এ আয়াতে “তোমরা যা অর্জন করেছ” এর ব্যাখ্যায় মুজাহিদ রহ. বলেছেন,
“তোমরা ব্যবসা-বানিজ্য করে যা অর্জন করেছ”।[1]
আবূ যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فِي الْإِبِلِ صَدَقَتُهَا، وَفِي
الْغَنَمِ صَدَقَتُهَا، وَفِي الْبُرِّ صَدَقَتُهُ وفي رواية، وَفِي الْبَزِّ».
“উটে যাকাত ফরয, ছাগলে যাকাত ফরয, আর গমে যাকাত ফরয। কোনো কোনো বর্ণনায়
এসেছে, আর ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাত ফরয”। [1]
সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ كَانَ يَأْمُرُنَا أَنْ نُخْرِجَ الصَّدَقَةَ مِنَ الَّذِي يُعَدُّ
لِلْبَيْعِ».
[1] মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ১৪৩২;
ইমাম হাকিম বলেছেন, এ হাদীসের উভয় সনদই বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ, তারা কেউ
হাদীসটি তাদের সনদে বর্ণনা করেন নি। সুনান দারাকুত্বনী, হাদীস নং ১৯৩২। কেউ কেউ এখানে (وَفِي الْبُرِّ) বলেছেন, অর্থাৎ গমে যাকাত ফরয। আবার কেউ এখানে (وَفِي الْبَزِّ) বলেছেন, এর অর্থ হবে কাপড় ব্যবসায়ীর সম্পদে যাকাত ফরয,
অর্থাৎ ব্যবসায়িক সম্পদে যাকাত ফরয। দেখুন, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১৫৫৭,
তাহকীক, শু‘আইব আরনাঊত, পৃষ্ঠা ৩৫/৪৪১; আল-মাজমু‘, ইমাম নাওয়াবী, ৬/৪৭।
“ব্যবসায়ের জন্য প্রস্তুতকৃত সম্পদ থেকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যাকাত আদায় করতে নির্দেশ দিতেন।”[1]
ইজমা‘: ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাত ফরয হওয়ার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ইজমা
সংঘটিত হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করেন নি।
ব্যবসায়িক
পণ্যে
যাকাত
ফরয
হওয়ার
শর্তাবলি:
ব্যবসায়িক
পণ্য হতে হলে দু’টি শর্ত পূর্ণ হতে হবে:
প্রথমত: পণ্যটিতে ব্যবসার কাজ তথা ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়া। অর্থাৎ পণ্যটি নগদ
অর্থে ক্রয় করা বা প্রতিদান বা ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে ক্রয় করা বা তাৎক্ষণিক ঋণ বা
বাকী ঋণের বিনিময়ে ক্রয় করা, এমনিভাবে কোনো মহিলা মাহর বা খোলা তালাকের বিনিময়
হিসেবে কোনো
[1] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ১৫৬২,
আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘ঈফ বলেছেন; আল-মু‘জাম আল-কাবীর, তাবরানী, ৭/২৫৩, হাদীস নং ৭০২৯; আস-সুনান
আস-সাগীর, বাইহাকী, ২/৫৭, হাদীস নং ১২০৬; আদ-দুররুল মানসূর, ১/৩৪১।
পণ্য
গ্রহণ করলে। কিন্তু বস্তুটি উত্তরাধিকারসূত্রে বা দানসূত্রে বা ত্রুটির কারণে ফেরত
দিলে বা কারো মালিকানাধীন জমিতে চাষাবাদ করলে এতে ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত ফরয হবে
না।
দ্বিতীয়ত: ব্যবসার নিয়ত তথা লাভের নিয়ত থাকতে হবে; যদিও
কোনো কোনো অবস্থায় লাভ নাও হতে পারে।
অতএব,
কেউ যদি বসবাসের জন্য একটি বাড়ি ক্রয় করে, অতঃপর সে ক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি লাভে
সেটি বিক্রয় করে দিলো। এমতাবস্থায় বাড়িটি ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে গণ্য হবে না।
কেননা ক্রেতা বাড়িটি ব্যবসা এবং লাভের উদ্দেশ্যে শুরুতে ক্রয় করেন নি; বরং
বসবাসের জন্য ক্রয় করেছেন।
এমনিভাবে
কারো কাছে নিজের ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি থাকলে সেটির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিক্রয়
করলে এতে লাভবান হলে সেটিও ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে গণ্য হবে না।
পক্ষান্তরে,
গাড়ি ব্যবসায়ী ব্যবসার জন্য গাড়ি ক্রয় করল, অতঃপর বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত
গাড়ির একটি গাড়ি সে নিজে ব্যবহার করলে উক্ত গাড়িটি তার ব্যবসায়িক পণ্য থেকে আলাদা
হবে না; বরং সেটিও ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে গণ্য হবে এবং এতে যাকাত ফরয হবে।
আবার
কেউ ব্যবসার উদ্দেশ্যে মাল ক্রয় করলে এতে লাভ না হলে বা লোকসান হলেও উক্ত সম্পদ
ব্যবসার সম্পদ বলেই গণ্য হবে এবং এতে ব্যবসায়িক সম্পদের যাকাতের বিধান প্রযোজ্য
হবে।
তবে
কেউ শুরুতে ব্যবসার উদ্দেশ্যে কিছু ক্রয় করলে বিক্রি করার পূর্বে নিয়ত পরিবর্তন
করলে তার নিয়ত ধর্তব্য হবে। কেননা সে ব্যবসায়িক মালের থেকে ব্যক্তিগত মালের নিয়ত
করেছে। সুতরাং তার নিয়ত অনুসারে যাকাত ফরয হবে। তেমনিভাবে কেউ ব্যক্তিগত ব্যবহারের
জন্য কিছু ক্রয় করে পরে সেটি ব্যবসার জন্য বিক্রয়ের নিয়ত করলে সেটি ব্যবসায়িক পণ্য
হিসেবে গণ্য হবে।
এমনিভাবে
নিম্নোক্ত লেনদেনগুলোও ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে ধর্তব্য হয়ে থাকে:
ক- লাভের
উদ্দেশ্যে বেচাকেনারকৃত সব ধরণের পণ্য। এতে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক প্রকল্প বা অংশীদারি
প্রকল্প, একক কোম্পানি বা বা সমষ্টিগত কোম্পানি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হবে।
খ-
দু’পক্ষ ব্যবসায়ীর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীগণের লেনদেন। যেমন, দালাল, আমদানিকারক ও
বায়ার ইত্যাদি।
গ-
মানি একচেঞ্জ, বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীর লেনদেন।
তৃতীয়ত: উপরোক্ত
শর্তসমূহের সাথে সোনা-রুপার যাকাত ফরয হওয়ার যেসব শর্তাবলী রয়েছে সেসব শর্তাবলী
ব্যবসায়িক সম্পদের মধ্যে পাওয়া যেতে হবে। আর তা হলো: নিসাব পূর্ণ হতে হবে। ৮৫
গ্রাম সোনার মূল্যের সমান হতে হবে, সে সম্পদে বছর অতিক্রান্ত হতে হবে, নিজের ও
পরিবারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে এবং ঋণমুক্ত হতে হবে।
ব্যবসায়িক
সম্পদ
ঋণমুক্ত
হওয়ার
নিয়ম:
ব্যবসায়ীর
ঋণের অর্থ যদি অন্যের কাছে থাকে এবং সে যখন ইচ্ছা তা আদায় করতে সক্ষম হয় তবে উক্ত
সম্পদ তার নগদ অর্থ বা ব্যবসায়িক সম্পদের সাথে মিলিয়ে যাকাত আদায় করবে; যদি তাতে
একবছর পূর্ণ হয়।
আবার যদি
ব্যবসায়ীর কাছে ঋণের অর্থ ব্যতীত অন্য সম্পদ না থাকে এবং ঋণের সম্পদ নিসাব পরিমাণ
হয় এবং উক্ত অর্থ যে কোনো সময় আদায় করতে সক্ষম হয় তবে তা থেকেও যাকাত আদায় করতে
হবে।
অন্যদিকে
যাকাতদাতার ঋণের অর্থ যদি নিঃস্ব-দরিদ্র বা ঋণ অস্বীকারকারীর কাছে থাকে, সহজে উক্ত
অর্থ আদায় করতে সক্ষম না হয় তবে যখন উক্ত অর্থ আদায় করতে সক্ষম হবে তখন শুধু সে
বছরের যাকাত আদায় করবে। বিগত বছরের যাকাত আদায় করতে হবে না। যদিও অনেক বছর
অতিবাহিত হয়।
অন্যদিকে
ব্যবসায়ীর যদি এমন ঋণ থাকে যা তার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততা নেই যেমন, সে যদি
কিস্তিতে স্থাবর সম্পত্তি, বাড়ি, কারখানা, জমি ইত্যাদি ক্রয় করল, -যা বর্তমানে
প্রায়ই দেখা যায়- এ ধরনের ঋণকে বিনিয়োগ ঋণ বলে। কোনো কোনো
ক্ষেত্রে এ ধরণের ঋণের কিস্তি অনেক বছর চলতে থাকে। আবার দেখা যায়, এ জাতীয় ঋণের
পরিমাণ ব্যবসায়ীর ব্যবসার সব সম্পদের চেয়েও বেশি। এ জাতীয় ঋণ থাকলে কী তাকে যাকাত
দিতে হবে? এ ঋণের সাথে কী তার ব্যবসার সম্পর্ক আছে? সে ব্যাপারে আলেমগণ ‘প্রথম
যাকাত সম্মেলন ১৯৮৪’ মোতাবেক (১৪০৪ হিজরী) এ একমত হয়েছেন যে, ‘যদি ঋণের কিস্তি
তাৎক্ষণিক আদায় করতে হবে না এমন হয় তবে এ জাতীয় ঋণ যাকাত ফরয হওয়াতে বাধাগ্রস্ত
করে না।’[1]
[1] বিস্তারিত দেখুন, মাউসু‘আতুল
কাদাইয়াল ফিকহিয়্যাহ আল-মু‘আসারাহ ওয়াল ইকতিসাদিল ইসলামী, ড. আলী সালুস, পৃষ্ঠা
৫২৪।
ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাতের পরিমাণ:
ব্যবসায়িক সম্পদের যাকাতের পরিমাণ সোনা-রুপার যাকাতের পরিমাণের মতোই। কারো কাছে সোনা বা রুপার নিসাবের পরিমাণ ব্যবসায়িক সম্পদ থাকলে এবং তা একবছর
অতিবাহিত হলে বছর শেষে তাতে ২.৫% হিসেবে যাকাত ফরয হবে। ব্যবসায়ী সোনা বা রুপা যে
কোনো একটির হিসেব করে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে। [1]
ব্যবসায়ী কীভাবে
ব্যবসায়িক পণ্য থেকে যাকাত নির্ধারণ করবে?
ব্যবসায়ী
কর্তৃক নির্ধারিত যাকাতের বছর পূর্ণ হলে পূর্বোক্ত নিয়মানুসারে যেগুলো ব্যবসায়িক
পণ্য হিসেবে ধর্তব্য সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করবে। অতঃপর এ অর্থ তার নগদ অর্থের
সাথে একত্রিত করবে (উক্ত নগদ অর্থ ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করুক বা না করুক)। এ অর্থের সাথে ঋণের যে অর্থ সহজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে (পূর্বোক্ত নিয়মানুযায়ী) সে অর্থ যোগ করবে। অতঃপর,
ব্যবসায়ীর ওপর এক বা একাধিক ব্যক্তির ঋণ থাকলে সে অর্থ বিয়োগ (বাদ) করবে। অতঃপর
অবশিষ্ট অর্থ নিসাব পরিমাণ ও বছর অতিবাহিত হলে ২.৫% হারে যাকাত আদায় করবে।
[1] ব্যবসায়িক
সম্পদের যাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন, সালিহ ইবন আব্দুল আযীয ইবন মুহাম্মদ ইবন
ইবরাহীম আলে শাইখ-এর ওয়েব সাইট (http://zakat.al-islam.com/Loader.aspx?pageid=393) ও ড. ইউসুফ কারদাভীর ব্যবসায়ী কীভাবে তার ব্যবসায়িক পণ্যর যাকাত
দিবে?
ইমাম আবূ উবাইদ
রহ. মাইমূন ইবন মিহরান রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
«إِذَا حَلَّتْ عَلَيْكَ الزَّكَاةُ فَانْظُرْ مَا
كَانَ عِنْدَكَ مِنْ نَقْدٍ أَوْ عَرْضٍ لِلْبَيْعِ، فَقَوِّمْهُ قِيمَةَ
النَّقْدِ، وَمَا كَانَ مِنْ دَيْنٍ فِي مَلَاءَةٍ فَاحْسِبْهُ، ثُمَّ اطْرَحْ
مِنْهُ مَا كَانَ عَلَيْكَ مِنَ الدَّيْنِ، ثُمَّ زَكِّ مَا بَقِيَ».
“যখন তোমার ওপর যাকাত ফরয হবে তখন তোমার কাছে যে নগদ ও ব্যবসায়ী পণ্য আছে
সেগুলো দেখো। পণ্যকে নগদ অর্থের মূল্যে মূল্য নির্ধারণ করো। এর সাথে আদায় করতে
সামর্থ্য যোগ্য ঋণের অর্থ একত্রিত করো। অতঃপর তোমার ওপর ঋণ
থাকলে তা বিয়োগ করো। অতঃপর অবশিষ্ট সম্পদে যাকাত আদায় করো।” [1]
ব্যবসায়ীর
ফরয
যাকাতের
সহজ
সূত্র:
যাকাত =
(ব্যবসায়িক পণ্যের বাজার মূল্যমান + নগদ অর্থ + আদায়যোগ্য ঋণ - ব্যবসায়ীর ওপর
অন্যের ঋণ) × যাকাতের পরিমাণ ২.৫%। [2]
যেমন,
কারো কাছে ব্যবসায়িক পণ্য কাপড় রয়েছে যার বাজারদর ৫০০০০০ টাকা + নগদ অর্থ ৫০০০০০
+ আদায়যোগ্য ঋণ ২০০০০০, মোট= ১২০০০০০ টাকা - ব্যবসায়ীর
ওপর অন্যের ঋণ ৪০০০০০ টাকা = ৮০০০০০ টাকা × যাকাতের পরিমাণ ২.৫% হারে = ২০০০০ টাকা বাৎসরিক যাকাত।
[1] কিতাবুল
আমওয়াল, আবু ‘উবাইদ আল-কাসিম ইবন সাল্লাম, পৃষ্ঠা ৫২১, আসার নং ১১৮৪; আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, ড. ওয়াহবা
যুহাইলী, ১০/৫৭১।
ব্যবসায়ী তার
পণ্যের কোন সময়ের মূল্য নির্ধারণ করবেন?
ব্যবসায়ী
তার ব্যবসার পণ্যের বর্তমান বাজারদর নির্ধারণ করবেন। এতে বর্তমান বাজারদর তার
ক্রয়মূল্যের বেশি হোক বা কম হোক সেটা ধর্তব্য হবে না। বর্তমান বাজারদর বলতে
যাকাত ফরয হওয়ার সময় উক্ত পণ্যটির বাজারে বিক্রয়মূল্য যতো টাকা সেটি নির্ধারণ
করা। কিন্তু বাজারের বিক্রয়মূল্য যদি পণ্যটির খরচের (ক্রয়মূল্যের ও পরিবহণ খরচের)
চেয়ে কম হয় তখন যাকাত প্রদানকারীকে লোকসান থেকে মুক্ত করতে তার পণ্যটির পাইকারী
মূল্য নির্ধারণ করা হবে; যদিও উক্ত ব্যবসায়ী তার পণ্যটি পাইকারী মূল্যে বিক্রয়
করুক বা না করুক। এ মতটি মক্কার “মাজমা‘উল
ফিকহ” গ্রহণ করেছেন। যেমন, সে পণ্যটি ১০০ টাকার বিনিময়ে ক্রয় করল; কিন্তু সেটি কমে
বর্তমানে বাজারে খুচরা মূল্য ৭০ টাকা হয়েছে, এবং পাইকারী মূল্য ৬৫ টাকা, তখন সে
উক্ত পাইকারী মূল্য ৬৫ টাকা ধরেই যাকাতের হিসেব করবে। পণ্যটি নষ্ট হয়ে গেলে তার
যাকাত দিতে হবে না।
সরাসরি পণ্যদ্রব্য থেকে নাকি তার মূল্যমান থেকে যাকাত
প্রদান করা হবে?
ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাতের মূল হলো পণ্যটির বাজারদর
নির্ধারণ করে তা থেকে যাকাত আদায় করা, ইতোপূর্বে যেভাবে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব,
সরাসরি পণ্যদ্রব্য থেকে যাকাত না দেওয়াই উত্তম। কেননা উমার ইবনুল খাত্তাব
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি হিমাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন,
«يَا حِمَاسُ، أَدِّ زَكَاةَ
مَالِكَ، فَقُلْتُ: مَا لِيَ مِنْ مَالٍ، إِنَّمَا أَبِيعُ الْجِعَابَ وَالْأُدْمَ،
فَقَالَ: أَقِمْهَا ثُمَّ أَدِّ زَكَاتَهَا».
“উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
হিমাস রহ.-কে বললেন, হে হিমাস, তুমি তোমার সম্পদের যাকাত আদায় করো। তখন হিমাস রহ.
বললেন, আমার তো (তেমন কোনো) সম্পদ নেই। আমি তূণ (তীর রাখার থলে) ও চামড়া বিক্রি
করি। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তুমি এর মূল্য
নির্ধারণ করে এর যাকাত দাও।”[1]
[1] আল-আমওয়াল, ইবন যানজুওয়াই, ৩/৯৪১, হাদীস নং ১৬৮৭;
মুসান্নাফ ইবন আব্দুর রায্যাক, হাদীস নং ৭০৯৯; মুসান্নাফ ইবন আবূ শাইবাহ, হাদীস নং ১০৪৫৬; সুনান আল-কুবরা লিল বাইহাকী, ৪/২৪৮,
হাদীস নং ৭৬০৩।
তাছাড়া
পণ্যের মূল্য দ্বারা যাকাত আদায় করলে গরীবের জন্য বেশি উপকার হবে। কেননা সে এর
দ্বারা তার বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে পারবে।
তবে
সরাসরি পণ্যদ্রব্য দ্বারাও যাকাত আদায় করা জায়েয। কেননা এতে যাকাত প্রদানকারীর
জন্য অনেক সময় কষ্ট সহজ হয় এবং ব্যবসায়ীর কাছে নগদ অর্থ নাও থাকতে পারে। তাছাড়া
সরাসরি পণ্যদ্রব্য দ্বারাও যাকাত গ্রহণকারী উপকৃত হতে পারে।
ব্যবসায়িক
সম্পদের
মতো
জমাকৃত
আরো
কিছু
সম্পদের
যাকাতের
বিধান:
ইসলাম নানা ধরণের জিনিসের ওপর যাকাত ফরয করেছে। মানুষ লাভের উদ্দেশ্যে শুধু ব্যবসাই করে না, বিভিন্ন উপায়ে অর্থ জমা করে
থাকে। এর মধ্যে প্রাইজ
বন্ড, অবসর ভাতা, পেনশন, শেয়ার ও স্বত্বাধিকার ইত্যাদি। নিম্নে এসব মালের যাকাতের বিধান বর্ণনা
করা হলো।
আবূ
শাইবাহ,
হাদীস নং ১০৪৫৬; সুনান আল-কুবরা লিল বাইহাকী, ৪/২৪৮, হাদীস নং ৭৬০৩।
প্রাইজ বন্ডের যাকাত:
বন্ড হলো এমন একটি সনদ যা ইস্যুকারী
এর বাহককে গায়ে লেখা মূল্য প্রদান করতে বাধ্য থাকে যখন সে তার হকদার হয়। সাথে সাথে
বন্ডের মূল্যের সাথে চুক্তি মোতাবেক অতিরিক্ত লাভও প্রদান করা হয়। এটি পরিষ্কার
সুদ ও হারাম। সে হিসেবে সাধারণভাবে লেনদেনকৃত বন্ড অবৈধ; কেননা তা এমন একটি ধার, যার সাথে সরাসরি লাভযুক্ত
রয়েছে। যারা এ ধরনের লেনদেনের সাথে যুক্ত রয়েছে তাদের উচিৎ আল্লাহর কাছে তাওবা
করা। বন্ডের যাকাতের হুকুম ঋণের যাকাতের মতোই। নিসাব পরিমাণ হলে এতে যাকাত ফরয হবে। অথবা বন্ডধারী ব্যক্তির অন্যান্য সম্পদ, যেমন টাকা-পয়সা, ব্যবসায়িক পণ্য ইত্যাদি একসাথে মিলে
যদি নিসাব পরিমাণ হয় এবং একবছর অতিবাহিত হয়, তাহলে তাতে যাকাত ফরয হবে এবং
২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে। আর যদি বন্ড এমন হয় যা সুনির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে
ভাঙ্গানো যাবে না, এমতাবস্থায়ও যাকাত রহিত হবে না, বরং যখন ভাঙ্গানো যাবে তখন বিগত সব
বছরের যাকাত প্রদান আবশ্যক হবে।
চাকরি
শেষে
প্রাপ্য
ভাতাসমূহ:
বেতন ভাতা: চাকরির পূর্ণ মেয়াদ শেষে চাকরিজীবীকে প্রদত্ত বেতনভিত্তিক
কল্যাণমূলক ভাতা, যা
সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট শর্তের বর্তমানে- নীতিমালা অনুযায়ী- প্রদান
করে থাকে।
অবসর ভাতা: সুনির্দিষ্ট অংকের টাকা, যা কোনো
সরকার বা প্রতিষ্ঠান,
সোশ্যাল ইনস্যুরেন্স নীতিমালার আওতাধীন কোনো
চাকরিজীবীকে প্রদান করে থাকে।
পেনশন বেতন: একজন সরকারী অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো চাকরিজীবী
চাকরির পূর্ণ মেয়াদ শেষে নীতিমালা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে যে বেতন পেয়ে থাকে সেটাকেই পেনশন বেতন বলে।
এগুলোর হুকুম হলো, চাকরিজীবী
যতদিন চাকরিরত থাকবে তাকে কোনো যাকাত দিতে হবে না। কেননা এ প্রকৃতির অর্থে ব্যক্তির পূর্ণ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত
নয়। আর অর্থ-সম্পদ ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ
মালিকানাধীন থাকা যাকাত ফরয হওয়ার জন্য
শর্ত। পূর্ণ মালিকানা না থাকার দলীল, চাকরিরত ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই তা ব্যয়
করতে পারে না; বরং চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগ
পর্যন্ত মালিকানাসুলভ কোনো অধিকারই তাতে খাটাতে পারে না। উল্লিখিত
বেতন-ভাতাদি সুনির্দিষ্টকরণ ও চাকরিজীবীকে প্রদানের ব্যাপারে যখন সিদ্ধান্ত হবে
এবং তাকে একসাথে অথবা বিভিন্ন মেয়াদে তা দেওয়া
হবে তখন এতে পূর্ণ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং যে পরিমাণ হস্তগত হবে, নিসাব পূরণ
হওয়ার শর্তে তা থেকে যাকাত দিতে হবে।
শেয়ারের
যাকাত:
শেয়ার হলো যেসব কোম্পানি
শেয়ার গ্রহণ করে সেসব শেয়ার হোল্ডিং কোম্পানির মূলধনের সম-অংশসমূহের
একাংশ।
উদাহরণ: একটি শেয়ার হোল্ডিং
কোম্পানির মূলধন হলো ত্রিশ লাখ ডলার। কোম্পানি শুরু করার সময় মূলধনকে দশ হাজার
ভাগে ভাগ করা হয়, প্রতি
ভাগের মূল্য (৩০০) ডলার। এ প্রতিটি অংশটিই হলো
শেয়ার। আর যিনি শেয়ারের মালিক তিনি তার শেয়ার অনুযায়ী কোম্পানির মালিকানায়ও শরীক
বলে গণ্য।
শেয়ার-নির্ভর
কোম্পানির লেনদেনের
হুকুম হলো, এ ধরণের লেনদেন বৈধ, যদি
কোম্পানির কার্যক্রম হারাম-নির্ভর না
হয় অথবা সুদী লেনদেন থেকে মুক্ত থাকে। এ ধরনের কোম্পানির অর্থের পরিমাণ যাকাতের নিসাব পরিমাণ হলে তাতে যাকাত ফরয হয়। যদি
কোম্পানি নিজে যাকাত প্রদান করে দেয় তবে শেয়ারধারী
ব্যক্তির জিম্মাদারি আদায় হয়ে যাবে। আর যদি
কোম্পানি যাকাত প্রদান না করে, তাহলে শেয়ারের বাজারদর হিসাব করতে হবে। যদি তা নিসাব পরিমাণ
হয় এবং এক বছর অতিক্রান্ত হয় তবে তাতে যাকাত ফরয
হবে। অর্থাৎ ব্যবসায়িক পণ্যের মতো ২.৫% হারে
যাকাত দিতে হবে। কেননা তা
ব্যবসায়িক সম্পদ হিসেবে পরিগণিত। উদাহরণস্বরূপ: এক ব্যক্তির কাছে ১০০০ শেয়ার
রয়েছে। যাকাত বের করার দিন প্রতি শেয়ারের মূল্য ১০ ডলার। সে হিসেবে তার শেয়ারের
মোট মূল্য দাঁড়াবে ১০০০০ ডলার। এটা নিসাব পরিমাণ সম্পদ থেকেও বেশি। তাই এক বছর
অতিক্রান্ত হলে এর যাকাত প্রদান আবশ্যক হবে।
বাড়ি
বা
দোকান
ভাড়াটিয়া
ব্যক্তির
সিকিউরিটি
হিসেবে
মালিককে
প্রদত্ত
অর্থের
যাকাত:
বাড়ি বা দোকান ইত্যাদি ভাড়াটিয়া
ব্যক্তির সিকিউরিটি হিসেবে মালিককে প্রদত্ত অর্থের যাকাতের বিধান হলো, ভাড়াটিয়া
ব্যক্তিকে এ জাতীয় টাকার যাকাত প্রদান করতে হবে না। কেননা এতে পূর্ণ মালিকানা
প্রতিষ্ঠিত নয়, যা যাকাত ফরয হওয়ার জন্য শর্ত। তবে এ অর্থ যখন ফেরত পাবে তখন তা নিসাব
পরিমাণ ও যাকাতের অন্যান্য শর্ত পূরণ হলে তাতে পূর্বের বছরের যাকাত দিতে হবে না;
বরং শুধু চলতি বছরের যাকাত আদায় করতে হবে।
স্বত্বাধিকারের
যাকাত:
স্বত্বাধিকার-কেন্দ্রিক
অর্থের যাকাত দিতে হবে। অজড়
কোনো কিছুর ওপর ব্যক্তির অধিকার-স্বত্ব, হতে পারে তা ব্যক্তির মেধাজাত কোনো বিষয়, যেমন
লেখক-স্বত্ব, আবিষ্কার-স্বত্ব অথবা ব্যবসায়িক কোনো
কার্যক্রম যা গ্রাহক সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ী ব্যক্তি গ্রহণ করে থাকেন,
যেমন ট্রেড নেইম,
ট্রেড মার্ক ইত্যাদি। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্বত্বাধিকারের একটি
আর্থিক মূল্য রয়েছে, যা ইসলামী শরী‘আহর দৃষ্টিতেও
কার্যকর। অতএব, ইসলামী শরী‘আহ’র বিধান
মোতাবেক তা ব্যবহারে আনা বৈধ। আর এ অধিকার সংরক্ষিত, কারো
পক্ষেই তা লঙ্ঘন করা জায়েয নয়। অবশ্য মূল লেখক-স্বত্বা অথবা আবিষ্কার-স্বত্বায়
যাকাত নেই; কেননা তাতে যাকাতের শর্ত অনুপস্থিত, তবে যদি স্বত্বাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অর্থ হস্তগত হয় তবে উপকার সাধনযোগ্য
সম্পদের ন্যায় তার যাকাত প্রদান ফরয হবে অর্থাৎ ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
চাকরিজীবীর
বেতনের
যাকাত:
কাজের বিনিময়ে কর্মী ব্যক্তি
যে অর্থ পেয়ে থাকে এতে সোনা-রুপার মতোই যাকাত দিতে হয়। অর্থাৎ যখন নিসাব পরিমাণ
হবে ও এক বছর অতিক্রান্ত হবে তখন তাতে যাকাত ফরয হবে। আর তাতে যাকাতের পরিমাণ হলো ২.৫%।
ব্যবসায়ীর
হারাম
সম্পদের
যাকাত:
যে সম্পদ অর্জন করা অথবা
যে সম্পদ থেকে উপকার লাভ শরী‘আতে নিষিদ্ধ তাই হলো হারাম মাল, যেমন মদের ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত অর্থ অথবা সুদ বা চুরিকৃত সম্পত্তি
ইত্যাদি। যে সম্পদ মূলে হারাম -যেমন মদ অথবা শূকর ইত্যাদির ব্যবসা থেকে অর্জিত সম্পদ,
এতে যাকাত নেই। তদ্রূপ যে সম্পদ মূলে হারাম নয়, তবে
অন্যকোনো কারণে শরী‘আতের বিধান বিঘ্নিত হওয়ার কারণে হারাম হয়েছে, যেমন চুরিকৃত সম্পদ, এরূপ সম্পদেও যাকাত নেই;
কেননা এ ধরনের সম্পদে ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়
না, যা যাকাত ফরয হওয়ার জন্য শর্ত। হারাম মালের ক্ষেত্রে করণীয় হলো, উপার্জন-পদ্ধতিতে সমস্যা
থাকায় এ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি কখনো তার মালিক হবে না, সময় যতোই গড়িয়ে যাক না কেন। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির ওপর আবশ্যক হবে মূল
মালিক অথবা তার উত্তারাধিকারীকে (যদি জানা
থাকে) সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া। আর যদি মূল
মালিক অথবা তার উত্তারাধিকারীকে চেনার বিষয়ে ব্যক্তি নিরাশ হয়ে পড়ে, তবে হারাম মাল থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মালিকের পক্ষ থেকে সদকা
হিসেবে কল্যাণমূলক কাজে তা ব্যয় করে দিতে হবে।
যদি হারাম কাজের মজুরি
হিসেবে সম্পদ অর্জন করে থাকে তাহলে অর্জনকারী তা কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে দিবে।
যার কাছ থেকে তা নিয়েছে তাকে ফেরত দিবে না; কেননা সে তা
আবারও গুনাহের কাজে ব্যয় করবে। যার কাছ থেকে হারাম মাল নেওয়া হয়েছে সে যদি অবৈধ
লেনদেন পরিত্যাগ না করার ব্যাপারে অনড় থাকে, যা তার সম্পদ
হারাম হওয়ার কারণ হয়েছে, যেমন সূদী লেনেদেনের টাকা,
তাহলে তার সম্পদ তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না, বরং তা কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হবে। যদি হারাম মাল হস্তগতকারী
ব্যক্তি মূল হারাম মাল ফিরিয়ে দিতে অপারগ হয়, তাহলে তার
স্থলে সমপরিমাণ মাল অথবা তার মূল্য মালিককে ফিরিয়ে দিবে, যদি
তাকে খুঁজে বের করতে পারে, অন্যথায় সমপরিমাণ মাল বা তার মূল্য মূল মালিকের পক্ষ থেকে সদকা করার নিয়তে কল্যাণমূলক খাতে
ব্যয় করে দিবে। [1]
[1] উপরোক্ত মাসআলাগুলো বিস্তারিত
দেখুন: মাজমু‘উল ফাতাওয়া ইবন বায, ১৪/১৯০; মাজমু‘ ফাতাওয়া ইবন ‘উসাইমীন, ১৮/১৭৫;
ফাতাওয়া ইসলামিয়া, ২/৮২; ইয়াসআলুনাকা ‘আনিয যাকাত, ৫২; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ্দায়িমা,
৮/১৬০; দুররুল মুখতার: ২/২৯১।
সম্পাদনা
: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ISLAMIC PROPAGATION OFFICE IN RABWAH
No comments:
Post a Comment
We will tell you the answer. Thank You .