Search This Blog

Saturday, November 19, 2022

Omar Khayyam | উমর খৈয়াম


মৃত্যুর ৮৮৮ বছর পরেও দোর্দণ্ড প্রতাপে বেঁচে আছেন ওমর খৈয়াম। গত শতকের ত্রিশের দশকে বাংলা ভাষায় এই কবির অমর কাব্য রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম অনুবাদ করতে শুরু করেন নজরুল। আর এর মাধ্যমে বাঙালিরাও বিশদভাবে পরিচিত হয় পারস্যের এ কবির সঙ্গে । 
স্থান, কাল ও ভাষাগত দিক থেকে ওমর খৈয়াম আমাদের একটু দূরের মানুষ ছিলেন, অথচ তাঁর নানান উক্তি আমাদের জীবনযাপনের অংশ হয়ে গেছে। নজরুলই বলতে গেলে দারুণভাবে তাঁকে আমাদের কাছের মানুষ করে দিয়েছেন। তিনি নিজে তো আমাদের কাছের মানুষই। বাংলায় লিখেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবিও তিনি। প্রচলিত একটি কথা আছে, ‘যদি তুমি এক জীবনে হাজার জীবন বাঁচতে চাও, তাহলে পড়ো। আর এক জীবনে হাজার জীবন বাঁচাতে চাও, তাহলে লেখো।’ 

তার পুরো নাম গিয়াসউদিন আবুল‌ ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল-খৈয়াম নিশাপুরি।ইরানী কবি, গণিতবেত্তা, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। 

তার বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ “Treatise on Demonstration of Problems of Algebra“ গ্রন্থে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধানের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এই পদ্ধতিতে একটি পরাবৃত্তকে বৃত্তের ছেদক বানিয়ে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করা হয়। ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারেও তার অবদান রয়েছে।

তিনি তার কবিতা সমগ্র, যা ওমর খৈয়ামের রূবাইয়াত নামে পরিচিত, তার জন্য বিখ্যাত। তার কাব্য-প্রতিভার আড়ালে তার গাণিতিক ও দার্শনিক ভূমিকা অনেকখানি ঢাকা পড়েছে। দর্শন ও শিক্ষকতায় ওমরের কাজ তার কবিতা ওবৈজ্ঞানিক কাজের আড়ালে অনেকখানি চাপা পড়েছে বলে মনে করা হয়। মধ্যযুগের মুসলিম মনীষা জামাকসারি ওমর খৈয়ামকে “বিশ্ব দার্শনিক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। 

অনেক সূত্রে জানা গেছে তিনি নিশাপুরে তিন দশক ধরে শিক্ষকতা করেছেন।ইরান ও পারস্যের বাইরে ওমরের একটি বড় পরিচয় কবি হিসাবে। এর কারণ তার কবিতা বা রুবাই এর অনুবাদ এবং তার প্রচারের কারণে। 

ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোতে এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায়। ইংরেজ মনীষা টমাস হাইড প্রথম অ-পারস্য ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম ওমর কাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তবে, বহির্বিশ্বে খৈয়ামকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেন এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড। তিনি খৈয়ামের ছোট ছোট কবিতা বা রুবাই অনুবাদ করে তা রুবাইয়্যাতে ওমর খৈয়াম নামে প্রকাশ করেন।

জন্ম:

ওমর খৈয়াম জন্ম গ্রহণ করেছিলেন হিজরী পঞ্চম শতকের শেষের দিকে সেলজুক সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে যুগে। খ্রিস্টীয় দিনপঞ্জিকা অনুযায়ী ১০৪৮ সালের ১৮ মে।তিনি ছিলেন সুলতান মালিক শাহ সেলজুকীর সমসাময়িক। অনেক ইতিহাসবিদের মতে সুলতান মাহমুদের মৃত্যুর কিছু আগে ওমর খৈয়াম জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। এখনকার ইরানের পুরাতন নাম ছিল পারস্য আর তার রাজধানী ছিল খোরাসান। ইরানের নিশাপুর শহরে ওমরের জন্ম। তার পিতা ছিলেন তাঁবুর কারিগর ও মৃৎশিল্পী। 

ইবনে খৈয়াম’ অর্থ খৈয়ামের ছেলে (অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, ওমর তার বাবার কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে নামের শেষে ‘খৈয়াম’ যুক্ত করেন)। এবং ‘নিশাপুরি’ অর্থ নিশাপুরে জন্ম। কিন্তু তার নামের ব্যাপারে বিতর্ক আছে কারণ, ‘খৈয়াম’ শব্দের অর্থ ‘যে ব্যক্তি তাঁবু তৈরি করে’। এক দিকে শোনা যায়, তার বাবা ধনী চিকিৎসক ছিলেন। অন্য দিকে কেউ দাবি করছেন ওমরের বাবা খৈয়াম ছিলেন একজন তাঁবু তৈরির কারিগর। তবে দ্বিতীয় মতটি বেশি প্রসিদ্ধ।

শিক্ষা:

ওমর খৈয়ামের শৈশবের কিছু সময় কেটেছে অধুনা আফগানিস্তানের বালখ শহরে। সেখানে তিনি বিখ্যাত মনীষী মহাম্মদ মনসুরীর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন ,তার পর তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন খোরাসানের অন্যতম সেরা শিক্ষক ইমাম মোয়াফককের অধীনে। তার ভাগ্যে ভালোই ছিল কারণ সে যুগে ইসলাম ছিল সব ধরনের গোঁড়ামি, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা বিবর্জিত। আর মুসলমানরাও ছিল মুক্তমনা ও জ্ঞানপিপাসু। ওমরের বাবা ইব্রাহিমও তেমনই একজন মুসলিম ছিলেন, যিনি ছেলের জন্য জরাথ্রুস্ট ধর্মে বিশ্বাসী এক শিক্ষক বামান্যর বিন মারযবানকে নিয়োগ দেন। এই বামান্যরই কিশোর ওমরকে গণিত, বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষা দেন। ইবনে সিনার ছাত্র বামান্যরের কাছেই ওমর খৈয়াম ইবনে সিনার দর্শন শিক্ষা লাভ করেন। 

গৌরবময় কর্মজীবন:

নিশাপুরে থেকে বিজ্ঞান, গণিত, দর্শন এবং জ্যোতির্বিদ্যার ওপর পড়াশোনা করার পর তিনি ১০৬৮ সালে প্রথমে বুখরা এবং পরে ১০৮০ সালে সমরখন্দে চলে যান সেখানে গিয়ে তিনি শহরের গভর্নর ও প্রধান বিচারপতি আবু তাহির আবদুল-রহমান ইবনে-আলাকের পৃষ্ঠপোষকতায় বীজগণিত সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করা শুরু করেন। 

জীবনের পুরো সময় জুড়ে ওমর তার সব কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন। দিনের বেলায় জ্যামিতি ও বীজগণিত পড়ানো, সন্ধ্যায় মালিক-শাহ-এর দরবারে পরামর্শ প্রদান এবং রাতে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চ্চার পাশাপাশি জালালি বর্ষপঞ্জি সংশোধন! ত্যাদি তত্ত্ব লিপিবদ্ধ করেন। কেবল গণিতচর্চাই নয় তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানেও সমান পারদর্শী ছিলেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চ্চার পাশাপাশি জালালি বর্ষপঞ্জি সংশোধনেও তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে৷ সুলতান মালিক- শাহ্ তাঁকে ইস্পাহান-এপর্যবেক্ষণকেন্দ্র তৈরি করার এবং পারস্য বর্ষপঞ্জি সংস্কারের দায়িত্বভার দিয়েছিলেন৷ 

সেলজুক সাম্রাজ্যের উজির ‘নিজাম-উল-মুলক্’-এর কাছে ওমর খৈয়াম নক্ষত্রপুঞ্জ ও জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণের জন্য একটি মান-মন্দির প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা চাইলে নিজামুল মুলক তাঁকে একটি মান-মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন এবং রাজকোষ থেকে বার্ষিক ১২০০ মিথকাল (পারস্যের প্রাচীন স্বর্ণমূদ্রা) বৃত্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। যেখান থেকে অন্তত ৩০ বছর আকাশ পর্যবেক্ষণ করা হবে। ৩০ বছরের লক্ষ্য এ জন্য ঠিক করা হয়েছিল যে এ সময়ে শনি গ্রহ তার কক্ষপথে একবার ঘূর্ণন শেষ করবে। পর্যবেক্ষণে খৈয়াম ১০২৯.৯৮ দিনে ২.৮২ বছর হিসাব করলেন। সে হিসাবে এক বছরের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৩৬৫.২৪২২ দিন। বর্তমানে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বছরের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেছে ৩৬৫.২৪২১৮৯ দিন বা ৩৬৫.২৪২২ দিন। ওমর খৈয়াম যা বহু বছর আগে যা হিসাব করেছিলেন, তাই অবশেষে আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করল । ওমর তার বর্ষপঞ্জির কাজ শেষ করেছিলেন ১০৭৮ সালে। ১০৭৯ সালের ১৫ মার্চ সুলতান জালাল আল-‌দিন মালিক শাহ সালজুক ওমরের সংশোধিত বর্ষপঞ্জী চালু করেন। যা ২০ শতক পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।

এই ক্যালেন্ডারের হিসাবে প্রতি ৫,৫০০ বছরে এক ঘণ্টার গড়মিল হয়ে থাকে। আমরা যে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করি তাতে প্রতি ৩,৩০০ বছরে একদিন গোলমাল হয়ে থাকে। কীভাবে পারস্য পঞ্জিকা সংশোধন করতে হবে তাও তিনি হিসাব করেছিলেন। ওমর একটি তারাচিত্র বা খ‌ন্ড চিত্রও তৈরি করেছিলেন যদিও এটি এখন আর পাওয়া যায় না।

ইসফাহান শহরে ওমরের দিনগুলি খুবই সুখময় কাটছিল। কিন্তু আততায়ীর হাতে সুলতান মালিক শাহ-এর মৃত্যুর পর তার বিধবা পত্নী টেরকেন খাতুন ওমরের ওপর রুষ্ঠ হলে ওমর হজ্ব করার জন্য মক্কা ও মদীনায় চলে যান।পরে তাকে নিশাপুরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। নিশাপুরে ওমর গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিষয়ক তার বিখ্যাত কাজগুলো সম্পন্ন করেন।একসময় তাকে নিশাপুরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। নিশাপুরে ওমর গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিষয়ক তার বিখ্যাত রচনাগুলো সমাপ্ত করেছিলেন। এই সময়কালই ছিল ওমরের জীবনে সবচেয়ে আদর্শ সময়। এই সময়কালকে বলা হয় ওমরের সমৃদ্ধি কাল।

গণিতচর্চা:

জীবদ্দশায় ওমরের খ্যাতি ছিল গণিতবিদ হিসাবে। এখন থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে বীজগণিতের যেসব উপপাদ্য এবং জ্যোতির্বিদ্যার তত্ত্ব ওমর খৈয়াম দিয়ে গেছেন সেগুলো এখনও গণিতবিদ এবং মহাকাশ গবেষক বা জ্যোতির্বিদদের গবেষণায় যথাযথ সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

তিনি পরাবৃত্ত ও বৃত্তের ছেদকের সাহায্যে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করেন। এছাড়া তিনি দ্বি-পদী রাশিমালার বিস্তার করেন। ওমরের আর একটি বড় অবদান হলো ইউক্লিডের সমান্তরাল স্বীকার্যের সমালোচনা যা পরবর্তী সময়ে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সূচনা করে। ১০৭০ খ্রিস্টাব্দে তার পুস্তক মাকালাত ফি আল জাবর্ আল মুকাবিলা প্রকাশিত হয়। এই পুস্তকে তিনি ঘাত হিসাবে সমীকরণের শ্রেণীকরণ করেন এবং দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ করেন। এই পুস্তকে তিনি কোনিক সেকশনের বিভিন্ন ছেদকের সাহায্যে নানারকম ত্রিঘাত সমীকরণ সমাধান করেন। অর্থাৎ জ্যামিতিক পদ্ধতিতে বাস্তব মূর আছে এমন ত্রিঘাত সমীকরণ প্রথম সমাধান করেন। তিনি বর্তমানে প্যাসকেলের ত্রিভুজ নামে পরিচিত দ্বিপদী সহগের ত্রিভুজাকারেও লিখেছিলেন।

জ্যোতির্বিদ্য:

ওমর খৈয়াম জ্যোতির্বিদ হিসাবেও সমধিক পরিচিত ছিলেন। যা তার জালালী বর্ষপঞ্জিকা সংশোধনী দেখলেই অনুমান করা যায়।

ওমর খৈয়ামের কাব্য প্রতিভা:

ওমর খৈয়ামের কবিতা সমগ্রকে বলা হয় "রূবাইয়াৎ"। যার প্রতিটি কবিতা অবিশ্বাস্য প্রতিভার সংমিশ্রণ। কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, "শরাব যেন ওমরের রুবাইয়াৎ"। ইরান ও পারস্যের বাইরে ওমরের বড় পরিচয় কবি হিসেবে। এর কারণ তার কবিতা বা রুবাইয়াৎ এর অনুবাদ এবং ভীষণ জনপ্রিয়তার কারণে। বিশেষ করে ইংরেজভাষী দেশগুলোতে ওমরের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজও ইংরেজি ভাষী ব্যতিরেকে জালালুদ্দিন রুমির পর ওমরই সর্বাধিক জনপ্রিয়।

প্রখ্যাত দার্শনিক ও সাহিত্যিক টমাস হাইড পারস্যের বাইরে প্রথম সাহিত্যিক যিনি ওমর খৈয়ামের কাজ সম্পর্কে গবেষণা করেছিলেন। তবে, বহির্বিশ্বে খৈয়ামকে সবচেয়ে জনপ্রিয় করেন এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড। ওমর খৈয়ামের ছোট ছোট কবিতা বা রুবাই অনুবাদ করে তা "রুবাইয়াতে ওমর খৈয়াম" নামে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এই কবিতাগুলো ওমরের কবিতা গুচ্ছের একাংশ। বাংলা সাহিত্যে ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াৎ অনুবাদ করেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেকে। ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে কাজী নজরুল ইসলামের অনুবাদকৃত "রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম" গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

সৈয়দ মুজতবা আলী ভূমিকা লিখেছিলেন। খৈয়াম কাজী নজরুল ইসলামকেও প্রচন্ড আকর্ষিত করেছিলেন। নজরুল নিজেও তা বহু জায়গায় লিখেছেন। নজরুল বহু রাত জেগে সমাপ্ত করেছিলেন রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম। নজরুল তুলনা দিয়েছিলেন তাকে শরাবের মতো। মার্কিন কবি জেমস রাসেল লোয়েল ওমরের রুবাইকেই অভিহিত করেছিলেন "চিন্তা- উদ্দীপক পারস্য উপসাগরের মুক্তা" বলে।

ফার্সি কাব্য-জগতে ওমর খৈয়াম এক বিশেষ চিন্তাধারা ও বিশ্বদৃষ্টির পথিকৃৎ। তিনি এমন সব চিন্তাবিদ ও নীরব কবিদের মনের কথা বলেছেন যারা সেসব বিষয়ে কথা বলতে চেয়েও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তা চেপে গেছেন। তাইতো মধ্যযুগের বিখ্যাত মুসলিম মনীষী জামাকসারি ওমর খৈয়ামকে বর্ণনা করেছিলেন “বিশ্ব দার্শনিক” হিসেবে।

ওমর তার কবিতায় প্রচুর তুলনা ও কাব্যিক উদাহরণ টেনেছেন, যার ফলে কিন্তু এক শ্রেণির লেখকও সুবিধা পেয়েছে। দর্শন বা বিজ্ঞান দিয়ে যে ভাব তুলে ধরা যায় না খৈয়াম তা কবিতার অবয়বে তুলে ধরতে চেয়েছেন। আর তাই যুক্তি ও আবেগের করুণ রসের প্রভাবে ওমর খৈয়ামের চার-লাইন বিশিষ্ট কবিতাগুলো কবিতা জগতে হয়ে উঠেছে অনন্য। দার্শনিকরা একটি বই লিখেও যে ভাব পুরোপুরি হৃদয়গ্রাহী করতে পারেন না, গভীর অর্থবহ চার-লাইনের একটি কবিতার মধ্য দিয়ে ওমর খৈয়াম তা সহজেই তুলে ধরেছেন। তার লেখা এই একটি কবিতার ভাবার্থ সৈয়দ মুজতবা আলীর অনুবাদে এমন,

اسرار ازل را نه تو دانی و نه من

وین حرف معما نه تو خوانی و نه من

هست از پس پرده گفتگوی من و تو

چون پرده بر افتد ، نه تو مانی و نه من


"সৃষ্টির রহস্য জানো না তুমি, জানি না আমি

এ এমন এক জটিল বাক্য যা পড়তে পারো না তুমি,

না আমি পর্দার আড়ালে তোমায় ওঁ আমার মাঝে চলছে

এ আলাপ পর্দা যেদিন উঠে যাবে সেদিন থাকবো না তুমি ও আমি।"

আবার কাজী নজরুল ইসলামের অনুবাদে এসেছিলো তার খোদাকে জানা ও বোঝার আগে নিজেকে জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজন। নজরুলের  অনুবাদ-

"বিশ্ব- দেখা জামশেদিয়া পেয়ালা খুঁজি জীবন- ভর

 ফিরনু বৃথাই সাগর গিরি কান্তার বোন আকাশ- ক্রোড়।

জানলাম শেষ জিজ্ঞাসিয়া দরবেশ এক মুর্শিদে


তার ৯৭১ তম জন্মদিনে গুগল ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে। 

জামশেদের এই জাম- বাটি এই আমার দেহ আত্মা মোর।"

ওমর খৈয়াম তার মৃত্যুর শেষ ইচ্ছে এঁকেছেনও নিজ কাব্যে। তিনি লিখেছিলেন

"তুঙ্গী ময় লল খোয়াম ওয়া দিওয়ানী

সদ্দ রমকী বায়েদ ওয়া নিফসে নাজি

ওয়াজ গাস মান ওয়াতু নিসফতে দর ওয়ারাজি

খোশতর বুদ আম সামলাকাত সুলতানী"

কবি কাজী নজরুল ইসলাম অনুবাদ করেছিলেন সেই কবিতার এমন-

"এক সোহারি রুটি দিও, একটু রুটি ছিলকে আর,

প্রিয় সাকি, তাহার সাথে একখানি বই কবিতার,

জীর্ণ আমার জীবন জুড়ে রইবে প্রিয়া আমার সাথ,

এই যদি পাই চাইবনা কো তখ্ত আমি শাহানশার!"


অন্যন্যা:

তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানপিপাসু মানুষ। বই পড়ে সেই পিপাসা মিটাতে চেষ্টা করতেন। তবুও বই পড়ার পিপাসা কখনো তার মেটেনি। তিনি জানতেন বই পড়ার গুরুত্ব, সেটা বুঝাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন...

‘রুটি-মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়।’ ওমর খৈয়ামের জীবনের অনেক দিকই আমাদের অজানা। তার অনেক কাজও দুর্ভাগ্যজনকভাবে হারিয়ে গিয়েছে কালের স্রোতে। তার দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, তিনি বিয়ে করেছিলেন এবং তার একটি সন্তানও ছিল।

মৃত্যু:

১১৩১ সালের ৪ ডিসেম্বর ওমর খৈয়ামের মৃত্যু হয়৷ মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৮৩ বছর৷ নিশাপুরে ওমরের সমাধি দেখতে অনেকটা তাঁবুর মতো। তাঁর সমাধির চারপাশ অজস্র ফুল গাছে ভরা।

  তাঁর কবরের ওপর তাঁরই লেখা একটি ছত্র লেখা আছে- “আয় দিল চুন জামানা মীকুনাদ গম নাকাৎনাগাহ দে রওয়াদ যে তন রুয়ানে পাকাৎবর সবজা নেশীন ও খোশ্ জী রোসে চন্দ্যাঁ পেশকে সব্জা বর দমদ আয খাকাৎ।”

তথ্য সূত্র-

*বাংলায় খৈয়াম ও নজরুল অনুবাদ- ড. শামসুল আলম সাঈদ;

*নজরুল ইসলাম ও ওমর খৈয়াম- সৈয়দ মুজতবা আলী

*উইকিপিডিয়া


No comments:

Post a Comment

We will tell you the answer. Thank You .

JFPathagar

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Vestibulum rhoncus vehicula tortor, vel cursus elit. Donec nec nisl felis. Pellentesque ultrices sem sit amet eros interdum, id elementum nisi ermentum.Vestibulum rhoncus vehicula tortor, vel cursus elit. Donec nec nisl felis. Pellentesque ultrices sem sit amet eros interdum, id elementum nisi fermentum.




Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *