পবিত্র মাহে রমজান
ফজিলত ও আলোচ্য শিরোনামটি পবিত্র কোরআনের সূরাতুল বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াত ও তিরমিজি শরিফে উল্লিখিত সওম অধ্যায়ের ৭৬৪ নম্বর হাদিসের দিকে ইঙ্গিত করে। সূরাতুল বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনটি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ তাফসিরে রুহুল মা’আনীতে আল্লামা মাহমূদ আলূসী বাগদাদী (রহ.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতটিতে যেমনিভাবে রোজার বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত বয়ান করা হয়েছে, অনুরূপ রোজার প্রতি মুমিন ও মুসলিম জাতিকে উদ্বুদ্ধ ও সঠিকভাবে রোজা পালনের পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।
মৌলিকভাবে মাহে রমজানে রোজা পালনের অপরিসীম ফজিলত ও গুরুত্ব রয়েছে যা আলোচ্য আয়াতে সংক্ষিপ্তভাবে ইরশাদ হয়েছে । সঠিকভাবে রোজা পালনে ইমানদাররা পরহেজগার ও মুত্তাকি হয়ে থাকে এটা তার মহা পুরস্কার। প্রশ্ন হলো কীভাবে একজন রোজাদার পরহেজগার ও মুত্তাকি হয়? তা বুঝতে হলে ‘রমজান’ শব্দের শাব্দিক অর্থ ভালোভাবে বুঝতে হবে। আরবি ভাষায় ‘রমজান’ শব্দের অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া, ভস্ম করে দেওয়া। উলামায়ে কেরামরা লিখেছেন রমজানকে রমজান এ জন্য বলা হয় যে, এ রমজান মাসে মহান রব্বুল আলামিন দয়া ও মেহেরবানি করে সঠিকভাবে রোজা পালনকারীদের পাপগুলোকে একেবারে ভস্ম করে ও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেন।কারণ বাকি ১১টি মাস দুনিয়াবি কাজ-কারবার করতে গিয়ে বান্দার অন্তরকে অনেক সময় পাপ কার্য আচ্ছন্ন করে ফেলে । মাহে রমজানে বান্দা যখন রোজা পালন করে আল্লাহর দরবারে কায়মনে অতীত গুনাহের ক্ষমা চায়, ভবিষ্যতে গুনাহ না করার সংকল্প করে এবং অতীত গুনাহের জন্য লজ্জিত হয়, তখন আল্লাহপাক দয়া করে মাহে রমজানের উসিলায় তার অতীত জীবনের গুনাহগুলো ক্ষমা করে তাকে প্রকৃত ইমানদার হওয়ার সুযোগ করে দেবেন। এভাবেই মূলত সঠিকভাবে একজন রোজা পালনকারী পরহেজগার ও মুত্তাকি হতে পারে ।
হাকিমুল উম্মত আল্লামা শাহ আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, একজন বান্দা যখন সঠিকভাবে রোজা পালন করে, এ রোজাই তাকে মূলত পরহেজগার ও মুত্তাকি হতে সাহায্য করে। এখন তার দিলে আল্লাহর ভয় আছে, আল্লাহর সামনে যেতে হবে তার পেরেসানি আছে, সেদিন আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়ে কী উত্তর দেবে এর ফিকির আছে, বেশি নেক আমল করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে। ইত্যাদি ধ্যান একজন রোজা পালনকারীর দিলে তৈরি হওয়ার নামই হলো পরহেজগার ও মুত্তাকি হওয়া। আর একজন মুমিন ব্যক্তি পরহেজগার ও মুত্তাকি হয়ে যদি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে পারে, তার জন্য এর থেকে বড় সফলতা আর কিছুই হতে পারে না। তিরমিজি শরিফে ৭৬৪ নম্বর হাদিসটি হলো। আল্লাহ নিজেই বলেন, (আস্সওমু লি ও আনা আজজিও বিহি) রোজা আমার জন্য আর আমিই তার পুরস্কার নিজ হাতে দান করব। সুবহানাল্লাহ। দুনিয়ার অন্যান্য আমলের প্রতিদানের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, কোনোটার প্রতিদান দশগুণ, কোনোটার সত্তরগুণ, কোনোটার শতগুণ, এমনটি দান-সদকার সাতশগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু রোজার ব্যাপারে আল্লাহ নিজেই বলেন, রোজাদারের পুরস্কার আমি নিজ হাতে দান করব। বোঝার বিষয় হলো রোজা এত ফজিলত এ কারণে যে, একজন রোজাদার যখন রোজা রাখার নিয়ত করে তখন সে সুবহে সাদেক উদিত হওয়ার আগ থেকে সূর্যাস্তের পর পর্যন্ত সব পানাহার ও স্ত্রী সহবাসসহ সব অন্যায়-অনাচার, মিথ্যা-গিবত ইত্যাদি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। প্রচণ্ড গরমের সময়েও, শত পিপাসা ও ক্ষুধায় অস্থির হওয়ার পরও সে আল্লাহর ভয়ে দিনে তা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত রাখে। যেহেতু রমজান মাস। আত্মসংযমের মাস। নিজের পশুত্বকে প্রতিহত করার মাস। এবং মুত্তাকি হওয়ার মাস। তাই সে এগুলোর দিকে পানাহারের নিয়তে দিনে একেবারেই তাকায় না বা তাকানোর চিন্তাও মাথায় আসে না। মূলত এর নামই তাকওয়া। আর একজন রোজাদার যখন প্রকৃত তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে রোজা পালন করবে, সে ব্যক্তিই আল্লাহর কুদরতি হাত থেকে রোজার পুরস্কার পাবে ইনশাআল্লাহ। প্রিয় পাঠক! অতি সংক্ষেপে মাহে রমজানের ফজিলত ও তাকওয়া সম্পর্কে এখানে লেখা হয়েছে। এ ছাড়াও মাহে রমজানের আরও বহু ফজিলত, বরকত রয়েছে যা লিখে, বয়ান করে শেষ করা যাবে না। চলুন! আর মাত্র কয়েকদিন পরই পবিত্র মাহে রমজান। এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করি। যাতে মাহে রমজানের পুরোপুরি হক আদায় করে রোজা পালন করতে পারি এবং মাহে রমজানে ঘোষিত আল্লাহর রহমত, মাগফেরাত ও ক্ষমা পেয়ে প্রকৃত পরহেজগার ও মুত্তাকি হতে পারি, আল্লাহপাক আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমিন ।
লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।
No comments:
Post a Comment
We will tell you the answer. Thank You .