Search This Blog

Friday, November 25, 2022

Al Kindi | আল কিন্দী



আল কিন্দি মুসলিম পেরিপ্যাটেটিক দার্শনিকগণের প্রথম ব্যক্তি ছিলেন এবং মুসলিম বিশ্বের গ্রীক ও হেলেনস্টিক দর্শনের জন্য তাঁর সংশ্লেষণ, অভিযোজন এবং প্রচারের জন্য "আরব দর্শনের পিতা" হিসাবে সর্বাধিক প্রশংসা করেছেন।


তিনি মুসলিম বিশ্বের সোনালি দিনের বিজ্ঞানী ও দার্শনিক। এই ব্যক্তির প্রতিভা এখনো বিশ্বের মানুষকে প্রভাবিত করে। পাশ্চাত্যেও তিনি সুপরিচিত। পাশ্চাত্যে আরবদের দার্শনিক হিসেবে তার খ্যাতি আছে।

আল কিন্দি তার সময়ের বিজ্ঞানের সব শাখায় অগাধ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। 

"পৃথিবীতে যা কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের মধ্যে অন্তর্নিহিত রয়েছে সত্য।”- আল কিন্‌দি

যদি প্রশ্ন করা হয়, কী সেই অন্তর্নিহিত সত্য? আল কিন্‌দি উত্তর দেবেন, ‘সৃষ্টিকর্তা’। দর্শন মানেই হচ্ছে সত্যের সন্ধান। আর আল কিন্‌দির নিকট এই সত্যের মূলে হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা। তার শ্রেষ্ঠ দার্শনিক কাজ ‘অন ফার্স্ট ফিলসফি’র অপর নাম অনেকে তাই বলে থাকেন ‘স্টাডি অব গড’। সৃষ্টিকর্তার অধ্যয়ন? হ্যাঁ, আল কিন্‌দি সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কেই অধ্যয়ন করবার চেষ্টা করেছেন। যেখানে অ্যারিস্টটলের দর্শন ছিল অস্তিত্ববান সকল সত্য নিয়ে কাজ করা, সেখানে কিন্‌দির দর্শন সৃষ্টিকর্তার খোঁজ করা। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, সৃষ্টিকর্তাই সকল পার্থিব অস্তিত্বের কারণ। আর তাই সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে ভাবনার মধ্যেই পার্থিব সকল দর্শন নিহিত। তাহলে কী দাঁড়ালো? অ্যারিস্টটলের দর্শন আর কিন্‌দির দর্শন এক সুতোয় গাঁথা।


জন্ম:

আবু ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে 'ইসহাক আ'-াবব আল-কন্নী (আরবী: أبو يوسف يعقوب بن إسحاق الصبّاح الكندي ; ল্যাটিন: Alkindus ;আল-কিন্দি কিন্দা গোষ্ঠীর লোক।এই গোত্রটি ছিল তৎকালীন আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী গোত্র, যাদের ইসলামের স্বর্ণযুগের প্রাথমিক পথপ্রদর্শক মনে করা হয়। তিনি ইরাকের কুফা নগরীতে ৮০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

জ্ঞানার্জন:

 তিনি বাগদাদে লেখাপড়া করেন এবং বাগদাদের পণ্ডিতদের সংস্পর্শে এসে তিনি জ্ঞান আহরণের দিকে বেশি ঝোঁকেন।

কর্মজীবন:

পড়ালেখা সমাপ্ত করে তিনি খলিফা মামুন এবং মুতাসিম এর দরবারে কাজ শুরু করেন। খলিফা আল মামুনের ভাই আল মুতাসিম বিল্লাহর রাজত্বকালেই তার প্রতিভা বিকশিত হয়। একপর্যায়ে তিনি  হাউসের অব উইসডমের  বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন।

দার্শনিক চিন্তা:

ব্যক্তির ক্ষেত্রে আল কিন্‌দির সবচেয়ে বড় প্রভাবক তথা আদর্শ ছিলেন অ্যারিস্টটল। দর্শনকে কিছুটা আধ্যাত্মবাদ এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করাই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। তাছাড়া তার দর্শনে অ্যারিস্টটলীয় এবং নিওপ্লেটোনিক চিন্তার সংমিশ্রণও দেখা যায়। সবমিলিয়ে আল কিন্‌দির দর্শন ও চিন্তার প্রভাবের উৎস খুঁজতে গেলে বারবার প্রাচীন গ্রীক দর্শনেই ফিরে যেতে হবে। এক্ষেত্রে তার পরিবার এবং জন্মকাল যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল।

আল কিন্দির দর্শন আলোচনা করতে গেলে অনেকেই তাকে ইসলাম দ্বারা প্রভাবিত মনে করেন। কিন্তু আল কিন্‌দি সর্বদা ধর্ম আর দর্শনের মাঝে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। মেটাফিজিক্স বা আধ্যাত্মবাদ নিয়ে তার সমৃদ্ধ দর্শনকে ধর্মতত্ত্বের সাথে মেলানোটা বোকামি। তিনি সৃষ্টিকর্তার একত্ববাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন এবং এর পক্ষে প্রমাণ স্থাপন করেছেন। তিনি পুরো পৃথিবীজুড়ে পরিবেশ প্রকৃতির প্রতিটি অংশে খুঁজে পেয়েছেন অসংখ্য ঐক্যের উদাহরণ, যারা প্রত্যেকেই একাধিকের সমন্বয়ে গঠিত। উদাহরণস্বরূপ, লাখো প্রজাতির সংখ্যাধিক্যের ঐক্যে গঠিত এক প্রাণিজগৎ। আবার এতো প্রজাতির মাঝে মানবজাতি একটি বিশেষ প্রজাতি হলেও তাদের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ব্যক্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য। তবে সকল স্বাতন্ত্র্যের ঐক্যেই গঠিত হয়েছে মানবজাতি। আর এসবই রূপকার্থে এক ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করে। পৃথিবীর সকল ভিন্নতাই শেষতক একসূত্রে গাঁথা। সেই ঐক্যর মাঝেই রয়েছেন ঈশ্বর।

আল কিন্দি বিশ্ব-জগতের রহস্যোদঘাটনের জন্য কার্যকরণের বিধানকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। তাঁর মতে বিশ্ব-চরাচরে কার্য-কারণের বিধান অমোঘ এবং সার্বিক। কার্য-করণের মাধ্যেমেই বিশ্বজগৎ আমাদের নিকট প্রতিভাত হয়। কার্য-করণের উপর এই জোর সত্ত্বেও আল কিন্দী ধর্মের ক্ষেত্রে মনে করতেন যে, বুদ্ধিগত জ্ঞানের চেয়ে অহিগত জ্ঞান শ্রেয়। এতদ্ব্যতীত, যে সমস্ত মুসলিম দার্শনিক জগৎকে শাশ্বত বলেছেন এবং আল্লাহর ন্যায় শাশ্বত কাল থেকে জগৎ বিকশিত হয়ে আসছে বলে মনে করেছেন, তাঁদের মতের তিনি বিরোধিতা করেন। আল কিন্দীর মতে বিশ্বজগৎ শাশ্বত নয়। স্রষ্টা কোনো একদিন শূন্যাবস্থা থেকে বিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। ভবিষ্যতে কোনো একদিন বিশ্বজগৎ বিধাতার হুকুমে শূন্যে বিলীন হয়ে যাবে।

বিশ্বজগৎ সম্পর্কে আল কিন্দীর এ অভিমত মৌলিক নয়। ষষ্ঠ শতকের খ্রিষ্টান দার্শনিকগণ আলেকজান্দ্রিয়াতে এরূপ অভিমত পোষণ করতেন। 

গ্রীক দর্শনের সমন্বয়:

আল কিন্‌দির সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল এই যে, তিনি স্থানীয় মুসলিম দর্শনের সাথে পাশ্চাত্য এবং ক্লাসিক্যাল গ্রীক দর্শনের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। আধ্যাত্মিকতার সাথে তিনি আধুনিকতার সংমিশ্রণ করেছেন। আজ তার কথা খুব একটা স্মরণ করা না হলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন দার্শনিক।

জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় অবদান:

আল কিন্দী জ্ঞানের একাধিক বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। আজ তার কথা খুব একটা স্মরণ করা না হলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন দার্শনিক এবং জ্যোতির্বিদও। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মধ্যযুগে পশ্চিমে জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম নামটিই ছিল আল কিন্‌দি।

 কিন্তু তার জ্যোতিষশাস্ত্র বিষয়ক গবেষণার কোনো কিছুই যথার্থভাবে টিকে নেই, যা নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব। তথাপি নিজের প্রধান কাজগুলো হারিয়েও আল কিন্‌দি আজ আধ্যাত্মিক দার্শনিক হিসেবে ভাস্বর। তার পরবর্তীকালে আধ্যাত্মিকতার দার্শনিকগণ তার দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং এখনো সে ধারা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি জ্যোতিষ শাস্ত্রকে একটি বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে পদার্থের ন্যায় নিরাময় প্রণালির ক্ষেত্রে আঙ্কিক অনুপাতের প্রয়োগ। ঔষধ প্রস্তুত প্রণালিতে অনুপাতের বিধান যে একটি গুরুত্তপূর্ণ বিধান, বাস্তবভাবে আল কিন্দী তা প্রমাণ করেন। দশম শতকের শ্রেষ্ঠ বই বিক্রেতা এবং প্রকাশক ইবনে আল নাদিম অসংখ্য মুসলিম বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকের বইয়ের তালিকা বা ‘ফিরিস্ত’ তৈরি করেছিলেন, যার কারণে আমরা আজ ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া অনেক বইয়ের কথাও জানতে পারছি। আল কিন্‌দির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটেছে। তার খুব কম বই আধুনিক যুগ পর্যন্ত টিকে থাকতে পেরেছে। কিন্তু ইবনে আল নাদিমের ফিরিস্ত থেকে আমরা জানতে পারি, বিজ্ঞান এবং দর্শনের উপর শতাধিক বই লিখেছিলেন আল কিন্‌দি। তার কাজগুলো তাকে দার্শনিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও তার দর্শন সংক্রান্ত বইয়ের চেয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ের সংখ্যাই বেশি! বলা বাহুল্য, আল কিন্‌দির কাজের উপর ভিত্তি করে তার পরিচয় বিজ্ঞানী হতেই পারতো।

সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়েও কাজ করেছেন এই গুণী পণ্ডিত। ‘অন দ্য এজেন্ট কজ অব জেনারেশন অ্যান্ড করাপশন’ এবং ‘ অন দ্য প্রোস্ট্রেশন অব দ্য আউটারমোস্ট স্ফিয়ার’ নামে সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ক দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন আল কিন্‌দি। আবহাওয়াবিদ্যা এবং পূর্বাভাস নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এই বইগুলোতে। অন্যদিকে গণিতশাস্ত্রেও যে তার দক্ষতা রয়েছে তার প্রমাণ হচ্ছে ‘অন পারস্পেক্টিভ’।

ধর্মের ক্ষেত্রে আল কিন্দী:

 আল্লাহকে আল কিন্দী সৃষ্টির মূল বলে স্বীকার করেছিলেন। বস্তু ও প্রাণীর মধ্যে স্তরক্রমে তাঁর প্রতিচ্ছায়া পড়ে। এই স্তরক্রম্যের মধ্য দিয়ে আত্মা দেহের বন্ধন থেকে মুক্তিলাভ করে অমরতা প্রাপ্ত হয়। আল কিন্দী ধর্মের ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক বিরোধী অভিমত পোষণ না করলেও দর্শন, বিজ্ঞান, জ্যোতিষ, চিকিৎসা, অঙ্ক অর্থ্যাৎ জ্ঞানের বিচিত্র শাখায় তাঁর আগ্রহ এবং অধ্যয়নের কারণে গোঁড়াপন্থী মুসলমানগণ আল কিন্দীকে অবিশ্বাসী বিবেচনা করেন।

মনোবিজ্ঞান:

মনস্তত্ত্ব নিয়ে কিন্‌দির বিখ্যাত কাজগুলো হচ্ছে ‘অন স্লিপ অ্যান্ড ড্রিম’, ‘ডিসকোর্সেস অন সোল’, ‘দ্যাট দেয়ার আর ইনকরপোরিয়াল সাবস্ট্যান্স’, ‘অন ডিসপেলিং সরোস’ ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কেবল শেষোক্তটিই টিকে আছে আজ অবধি।  আল কিন্‌দির মনোবিজ্ঞান বিষয়ক চিন্তাভাবনা ছিল তৎকালীন সময়ের তুলনায় যথেষ্টই উন্নত। ‘দ্যাট দেয়ার আর ইনকরপোরিয়াল সাবস্ট্যান্স’ বইটির মূল আলোচনাই আত্মাকে ঘিরে। নানান যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আল কিন্‌দি এ কথাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন বা করেছেন যে প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই একটি অশরীরী, অপার্থিব, নিরাবয়ব কিছু একটা রয়েছে, যা এর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে। এটি আত্মা। আত্মার ভিন্নতাই মানুষের চিন্তা-চেতনা, মননে আর ব্যক্তিত্বে ভিন্নতা আনে। আত্মা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার জ্যোতি। এই জ্যোতি মানুষকে আলোকিত করে। এখানে জ্যোতি দ্বারা আল কিন্‌দি একথাই বোঝাতে চেয়েছেন যে সৃষ্টিকর্তার গুণাবলী মানবাত্মার মধ্যে মিশে আছে। তিনি এসব গুণের খোঁজ করার তাগিদ দিয়েছেন। অন্যদিকে ‘ডিসকোর্সেস অন সোলস’ বইটিতে আল কিন্‌দি মৌলিক ব্যাখ্যার চেয়ে বরং অ্যারিস্টটল আর প্লেটোর বিভিন্ন তত্ত্বের উদাহরণ টেনে ব্যাখ্যা করেছেন।

আল কিন্‌দির মতে, আমাদের আত্মার প্রকৃত রূপটি হচ্ছে বিচক্ষণ, যুক্তিসঙ্গত এবং নৈতিক। কিন্তু বাহ্যিক পৃথিবীর নানা চাকচিক্য একে কলুষিত করলে এর একটি বিকৃত রূপ সৃষ্টি হয়। দেহের মৃত্যুতে সেই বিকৃত আত্মার মৃত্যু হলেও বেঁচে থাকে শুদ্ধ আত্মা! বুঝতে পারছেন না? শুদ্ধ আত্মা মানেই তো ন্যায় নৈতিকতা আর বিচক্ষণতা, যা মৃত্যুর পরও পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে বেঁচে থাকে। ‘অন ডিসপেলিং স্যাডনেস’ বইটিতে আল কিন্‌দি মানবাত্মাকে জাগতিক দুঃখ দুর্দশা থেকে দর্শনের মাধ্যমে সান্ত্বনা খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, পৃথিবীতে যা কিছুর বাহ্যিক অস্তিত্ব রয়েছে, তারই অশুদ্ধ হবার সম্ভাবনা থাকে। কারণ এসব বাহ্যিক বস্তু (বাড়ি, জমিজমা, অলঙ্কার ও অন্যান্য বিলাস সামগ্রী ইত্যাদি) প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকবে এবং এদের দ্বারা বা এদের জন্য কত পাপ সংঘটিত হবে, তার কোনো হিসাব নেই। অথচ আত্মা পূতপবিত্র এবং অবিনশ্বর। তাই নশ্বর বস্তুজগতের মোহে অন্ধ না হয়ে আত্মার অনুসন্ধান করতে হবে। নিজের বসবাসের ঘরখানি জাঁকালোভাবে না সাজিয়ে আত্মাকে সজ্জিত করতে হবে জ্ঞান দিয়ে আর পুণ্য দিয়ে। এবং যে ব্যক্তি একবার বাহ্যিক চাকচিক্যের মোহ থেকে বেরিয়ে এসে স্ব-আত্মার সন্ধান করতে শুরু করে, তার জীবনে দুঃখের অস্তিত্ব থাকে না।

রচনা:

খলিফা আল মামুনের ভাই আল মুতাসিম বিল্লাহর রাজত্বকালেই তার প্রতিভা বিকশিত হয়। পদার্থ, রসায়ন, দর্শন প্রভৃতির দুর্বোধ্য জটিল বিষয়ও তিনি সহজ-সরল ভাষায় প্রকাশের দক্ষতা দেখান। হয়তো এ কারণেই তার বইগুলো জনসাধারণের মধ্যে বেশি প্রচার লাভ করে।

জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতা দেখালেও দর্শন ও ধর্মশাস্ত্রের মুনশিয়ানাই তাকে করে বেশি খ্যাতিমান। বিভিন্ন বিষয়ে এ পর্যন্ত তার ২৭০টি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। অঙ্ক, জোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষবিজ্ঞান, জ্যামিতি এবং সংখ্যা বিষয়ে তার লেখা বই রয়েছে। অঙ্কশাস্ত্রের সব শাখায় বই লেখা ছাড়াও তিনি বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়েও বই লিখেছেন। পদার্থবিদ্যা ও সঙ্গীত বিষয়ে তার বেশ ক’টি বই রয়েছে। সঙ্গীতের যন্ত্রপাতি তৈরি করতে গিয়ে পরিমাপ বিষয়ে অঙ্কের ব্যবহার সম্পর্কে তিনি আটটি বই লেখেন। আরবদের মধ্যে তিনিই প্রথম সঙ্গীতবিদ্যাকে অঙ্কের মাপকাঠিতে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার পন্থা উদ্ভাবন করেন।

বহুভাষী হওয়ায় জ্ঞানের রাজ্যে তার বিচরণ বেশি ফলপ্রসূ হয়। তার ভাষাজ্ঞান বিশ্বের হারানো জ্ঞানভাণ্ডার পুনরুদ্ধারে বেশ সহায়ক হয়।

 তাকে দার্শনিক হিসেবে পরিচিত করেছে তার একমাত্র গ্রন্থ হিসেবে সম্পূর্ণরূপে টিকে থাকা ‘অন ফার্স্ট ফিলসফি’। এই বইয়ের মূল কপি, কিন্‌দির নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিটি সংরক্ষিত আছে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে।

আল কিন্‌দির মনোবিজ্ঞান বিষয়ক চিন্তাভাবনা ছিল তৎকালীন সময়ের তুলনায় যথেষ্টই উন্নত। ‘দ্যাট দেয়ার আর ইনকরপোরিয়াল সাবস্ট্যান্স’ বইটির মূল আলোচনাই আত্মাকে ঘিরে। নানান যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আল কিন্‌দি এ কথাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন বা করেছেন যে প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই একটি অশরীরী, অপার্থিব, নিরাবয়ব কিছু একটা রয়েছে, যা এর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে। এটি আত্মা। আত্মার ভিন্নতাই মানুষের চিন্তা-চেতনা, মননে আর ব্যক্তিত্বে ভিন্নতা আনে। আত্মা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার জ্যোতি। এই জ্যোতি মানুষকে আলোকিত করে। এখানে জ্যোতি দ্বারা আল কিন্‌দি একথাই বোঝাতে চেয়েছেন যে সৃষ্টিকর্তার গুণাবলী মানবাত্মার মধ্যে মিশে আছে। তিনি এসব গুণের খোঁজ করার তাগিদ দিয়েছেন। অন্যদিকে ‘ডিসকোর্সেস অন সোলস’ বইটিতে আল কিন্‌দি মৌলিক ব্যাখ্যার চেয়ে বরং অ্যারিস্টটল আর প্লেটোর বিভিন্ন তত্ত্বের উদাহরণ টেনে ব্যাখ্যা করেছেন।

মৃত্যু:

৮৭৩সালে বাগদাদে  ৭১বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র:

১. অনুপ সাদি, ২২ মার্চ ২০১৯, “আল কিন্দী নবম শতাব্দীর মেসোপটেমিয়ার মুসলিম দার্শনিক” রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএল: https://www.roddure.com/biography/al-kindi/

২. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৩৮-৩৯।

৩. দৈনিক নয়াদিগন্ত ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, 

৪.Abu Rida, M. A. H.(ed), 1950,  Al-Kindi, Rasa'il  al-kindi al-falsafiyya, vol. 2. Adamson, P. And Promann, P.E., 2012, The philosophical works of Al-Kindi, Karachi: Oxford University Press.

৫.ntv online:নাহিদ মোর্শেদ রিয়াদ

২২ এপ্রিল, ২০২১, ১৩:৪০

আপডেট: ২৩ এপ্রিল, ২০২১

৬.আল-কিন্দি; প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাশ্চাত্য দর্শন - ডক্টর আমিনুল ইসলাম (অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়); পৃষ্ঠা - ৩১৯; প্রথম শিখা প্রকাশ। দার্শনিক চিন্তাধারার পুরো অংশটুকুই বইয়ের এ অংশ থেকে তথ্য নিয়ে লেখা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

We will tell you the answer. Thank You .

JFPathagar

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Vestibulum rhoncus vehicula tortor, vel cursus elit. Donec nec nisl felis. Pellentesque ultrices sem sit amet eros interdum, id elementum nisi ermentum.Vestibulum rhoncus vehicula tortor, vel cursus elit. Donec nec nisl felis. Pellentesque ultrices sem sit amet eros interdum, id elementum nisi fermentum.




Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *