বায়‘আত মাসজিদ
প্রথমত: মসজিদে বায়‘আতের
পরিচয়:
মসজিদটি জামরাসমূহের
ডানে অবতরণস্থ মসজিদে হারামের দিকে ধাবিত, ব্রীজের পার্শ্বে মিনার নিকটে অবস্থিত।
জামরায়ে আকাবা হতে প্রায় ৫০০ মিটার দূরত্বে। মসজিদটি ছিল জাবালে সাবীরের কোনো এক
ঘাটিতে। জামরাত ও পার্শ্ববর্তী এলাকা বর্ধিত করার ফলে মসজিদ পাহাড় থেকে বাইরে পৃথক
হয়ে যায় এবং জামরাতের ব্রীজের শেষ প্রান্তে গিয়ে মিলিত হয়।
কথিত আছে যে, মসজিদটি
আবু জাফর আল মানসূর ১৪৪ হিজরী/৭৬১ খ্রিস্টাব্দে বা বলা হয় অন্য কেউ ২৪৪ হিজরীতে
নির্মাণ করেন। অতঃপর বহুবার সংস্কার হয়। বর্তমান নির্মাণ অবস্থা সুলতান আব্দুল
মজীদ আল-উসমানীর প্রায় ১২৫০ হিজরীতে। মসজিদটি লম্বা আকৃতির তার দৈর্ঘ পূর্ব-পশ্চিম
প্রায় ২৫ মিটার ও প্রস্থ উত্তর-দক্ষিণ প্রায় ১৫ মিটার। আয়তন ৩৭৫ মিটার। তার দু’টি
উন্মুক্ত চত্ত্বর রয়েছে। একটি কিবলার দিকে এবং দ্বিতীয়টি মসজিদের শেষ প্রান্তে। সেগুলো
বর্তমান মসজিদ ভূমি হতে কিছু উচ্চ স্থান বিশেষ ছাড়া আর কিছুই নেই। (আলফাকেহীর
তারীখে মক্কা: ৫/২০ প্রভৃতি গ্রন্থ)
দ্বিতীয়ত: মসজিদটির
হাকীকত বা রহস্য:
বলা হয় মসজিদটি সেই
স্থানে নির্মিত যেখানে নবুয়্যতের দ্বাদশতম বছরে প্রথম বায়‘আতে আকাবা সম্পন্ন হয়।
যাতে আনসারীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাঁর চাচা আব্বাস ইবন
আব্দুল মুত্তালিবের উপস্থিতিতে বায়‘আত করে থাকেন। দ্বিতীয় বায়‘আত হয়ে থাকে নবুওয়্যতের
ত্রয়োদশ বছরে।
কা‘ব ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু
আনহু বলেন, আমরা আমাদের মুশরিক হাজী সম্প্রদায়ের সাথে বের হলাম। সালাত আদায় করলাম,
জ্ঞানার্জন করলাম। এমতাবস্থায় আমাদের বয়োজৈষ্ঠ ও নেতা ছিলেন বারা ইবন মা‘রুর। ...তারপর শেষে বলেন, আমরা হজের জন্যে বের হই। আমরা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আইয়্যামে তাশরীকের (জিলহজের ১১, ১২ ও ১৩)
মাঝা-মাঝিতে আল- ‘আকাবায় মিলিত হওয়ার ওয়াদাবদ্ধ হই। যখন আমরা হজ হতে অবসর হলাম,
সেই রাত সমাগত হলো, যে রাতের ওয়াদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদেরকে দান করেছিলেন।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াদা পূরণের জন্য আমরা
আমাদের কাফেলা থেকে অতি সংগোপণে বের হয়ে ‘আকাবার নিকট এক ঘাটিতে একত্রিত হওয়ার
জন্য অনুপ্রবেশ করলাম। এ সময় আমরা ছিলাম সত্তরজন পুরুষ ও আমাদের সাথে দু’জন
মহিলা।’’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/৪৬০)
এ মসজিদের এ হলো
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যার কারণে এর নামকরণ হয় মসজিদে বায়‘আত। স্থানটির বিশেষ কোন
ফযীলতের কারণে তা চয়ন করা হয় নি। অবশ্য এ ঘাটিটি ছিল মিনার সবচেয়ে নিরাপদ ও নিকটতম
স্থান, যেখানে হাজীগণ অবতরণ করেন। এ বায়‘আত ছিল আইয়্যামে তাশরীকের (জিলহজের ১১, ১২
ও ১৩ তারিখের) মাঝখানে।
প্রথম শতাব্দি পর্যন্ত
সেখানে কোন মসজিদ ছিল না, অবশ্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক এই মসজিদ দ্বিতীয় শতাব্দির
মাঝা-মাঝিতে নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছেন। (তারিখুল কাভীম: ৫/৩০৯-৩১২)
ইমাম ইবন তাইমিয়্যা রহ. বলেন,
আনসারীগণ লাইলাতুল আকাবায় সেই উপত্যকায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট
বায়‘আত করেন যা জামরায়ে আকাবার পিছনে অবস্থিত, কেননা এটি এমন এক নিচু স্থান, যা
মিনা হতে নিকটে এবং আশ-পাশের লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে। সেই সত্তরজন আনসার তাদের
মুশরিক সম্প্রদায়ের সাথে হজ করেন তখনও মানুষ ইসলামের পূর্বে ও পরে মক্কায় হজ করত,
সেই সুবাদে তারা তাদের সম্প্রদায়ের সাথে হজ করতে এসে মিনায় অবতরণ করেন। অতঃপর তারা
উক্ত রাতে সেই স্থানে গমন করেন। তা নিকটতম ও নিরাপদ হওয়ার কারণে, না তার কোনো
ফযীলত রয়েছে সে জন্য। স্থানটির নিজস্ব কোনো নির্ধারিত ফযীলত রয়েছে সে উদ্দেশ্যে
তারা সেখানে যান নি। একারণেই পরবর্তীতে হিজরতের পর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম হজ সম্পাদন করেন তারপর তারা আর সেখানে যাননি ও
যিয়ারত করেন নি।
সেখানে যে মসজিদ নির্মাণ
হয়েছে তা মূলতঃ নতুন একটি মসজিদ। এমন কি মসজিদে হারাম ব্যতীত মক্কা ও তার আশ-পাশে
যত মসজিদ রয়েছে সবগুলিই নব নির্মিত এবং স্বয়ং মিনাতেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের যুগে কোনো নির্মিত মসজিদ ছিল না।’’ (মাজমু‘ ফাতাওয়া: ১৭/৪৭৮)
তিনি আরো বলেন, অনুরূপ
সেখানে নির্মিত সমস্ত মসজিদই যেমন: যে মসজিদগুলো জামরাতের নিকট নির্মিত, মসজিদে
খায়েফের পার্শ্বের মসজিদ; যাকে বলা হয়: ‘গারে মুরসালাত’ যেখানে সূরা মুরসালাত
অবতীর্ণ হয়। পাহাড়ের উপর এক মসজিদ যাকে বলা হয়: ‘মাসজিদে কাবশ’ ইত্যাদি।
এ সব স্থানে সালাত, দো‘আ
বা অন্য কোনো নিয়তে যাওয়ার বিধান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদান করেন নি।
এ সব স্থানের কোনো
কিছুকে চুম্বন ও স্পর্শ করার ব্যাপারটি স্পষ্ট। তা নিকৃষ্টতম বিদ‘আত। এগুলো নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনের কোনো অংশ নয়।
হজ, উমরা ও যিয়ারত
বিষয়ের কতিপয় লেখক মক্কা ও তার আশ-পাশের মসজিদগুলোর যিয়ারত করা মুস্তাহাব উল্লেখ
করেন। আমি আমার প্রথম জীবনে হজ করার পূর্বে একটি হজের বই লিখেছিলাম তাতে উলামায়ে
কিরামের এ ব্যাপারে মতামতগুলিও জমা করে পেশ করি। আমাদের নিকট তারপর স্পষ্ট হয়ে যায়
যে, যা কিছু এ বিষয়ে ঘটে থাকে সব কিছুই নবাবিস্কৃত বিদ‘আত। যার শরী‘আতে কোনো
ভিত্তি নেই।
নিশ্চয়ই মুহাজির ও
আনসারগণের মহান পূর্বসূরীগণ এর কোনো কিছুই করেন নি। জ্ঞান ও হিদায়াতের ইমামগণ এগুলো থেকে
নিষেধ করেন। মসজিদে হারামই একমাত্র মাসজিদ যার উদ্দেশ্যে ভ্রমন, যিয়ারত, সালাত, দো‘আ
ত্বাওয়াফ ইত্যাদি ইবাদতের জন্য বিধিবদ্ধ।
অতএব, মসজিদে হারাম
ব্যতীত মক্কার কোনো খাস মসজিদ নেই যার উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে যিয়ারত বিধিবদ্ধ। কোনো
মসজিদে গিয়েই অনার্থক ভীড় করাও উচিৎ নয়। কোনো কোনো মানুষ যা করে থাকে সে মসজিদগুলোতে
যেমন দো‘আ, সালাত ইত্যাদি। যদি বেচারাগণ এগুলি মসজিদে হারামেই করত, তবে তাদের জন্য
তা কতইনা উত্তম হতো; বরং তা শরী‘আতসম্মত সুন্নাত। পক্ষান্তরে অন্য মসজিদে ফযীলত পাওয়ার
জন্য যা কিছু করা হয় সেগুলো শরী‘আত পরিপন্থী বিদ‘আত। (ইকতিদ্বাউস
সিরাত আল-মুস্তাকিম: ২/৩৩৮)
তৃতীয়ত: কোনো কোনো হাজী
এখানে যেসব শরী‘আত পরিপন্থী বিষয়ে লিপ্ত হয়:
মসজিদে বায়‘আতে কোনো কোনো
হাজী বেশ কিছু বিদ‘আত ও সুন্নাত পরিপন্থী কর্মে লিপ্ত হয়, তারা যেন তা হতে সতর্ক
হন সেজন্য নিম্নে তার কিছু উল্লেখ করা হলো:
১। সে
মসজিদগুলোতে নেকীর উদ্দেশ্যে যাওয়া ও তার বিশেষ পবিত্রতা ও বৈশিষ্ট্যর ধারণা রাখা।
২। অন্য
মসজিদ থেকে এর সালাতের ফযীলত বেশি বিশ্বাস করা।
৩। সেখানে
গিয়ে খুব করে দো‘আ করা।
৪। তার
ভেতরে গিয়ে সম্মিলিতভাবে দো‘আয় লিপ্ত হওয়া।
৫। তার
দেয়ালে লেখা-লেখি করা।
৬। তার
দেয়ালের বরকত গ্রহণ ও তার দরজা স্পর্শ করা এবং তার ধুলা-বালি গ্রহণ করা।
৭। সেখানে
বিভিন্ন ম্যাসেজ লেখা, টাকা-পয়সা দেয়া, চিত্র বা সুতা-নেকড়া বিভিন্ন বিশ্বাসে
স্থাপন করা।
A lhamdulikkah
ReplyDelete