Search This Blog

Thursday, September 8, 2022

জুমু‘আর সালাতের প্রথম আযানের বিধান | حكم الأذان الأول لصلاة الجمعة



জুমু‘আর সালাতের প্রথম আযানের বিধান

সালাতের সময় সম্পর্কে মানুষকে অবগত করা এবং সালাতের প্রতি আহ্বান করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা আযানের বিধান চালু করেন। সালাতের সময় হলে আযানের মাধ্যমে মানুষকে সালাতের প্রতি আহ্বান করা হয় এবং মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয়, যে এখন সালাতের সময় হয়েছে মসজিদে যেতে হবে। আর সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর জন্য সালাত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ইকামতের বিধান চালু রাখা হয়েছে। একামত শুনে মানুষ সালাত আরম্ভ করবে। 


আযানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: 

মক্কা হতে মদিনায় হিজরতের প্রথম বৎসরই আযানের প্রচলন শুরু হয়। আযানের প্রচলন সম্পর্কে হাদীসে একটি বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে- 

মুসলিমরা যখন মদিনায় হিজরত করল, তখন তারা সালাতের সময় হলে একত্র হত এবং সালাত আদায় করত। সালাতের ওয়াক্ত হলে, তাদের আহ্বান করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। একদিন তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করল যে, কীভাবে সালাতের সময় হলে মানুষকে আহ্বান করা যায়। কেউ কেউ বলল, আমরা খৃষ্টানদের মত নাকুস বাজাবো আবার কেউ কেউ বলল, আমরা শিঙ্গায় ফুঁ দিব। প্রস্তাবগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পছন্দ না হওয়াতে কোনোটিই গৃহীত হয় নি। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, একজন লোককে দায়িত্ব দেওয়া হোক, সে সালাতের ওয়াক্ত হলে মানুষকে ডেকে নিয়ে আসবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দায়িত্ব দিয়ে বললেন, «يَا بِلَالُ قُمْ فَنَادِ بِالصَّلَاةِ» ‘হে বেলাল, তুমি মানুষকে সালাতের ওয়াক্ত হলে সালাতের জন্য ডাকবে”। এ আলোচনায় আব্দুল্লাহ ইবন আবদে রাব্বি রাদিয়াল্লাহু আনহু নামে একজন সাহাবী উপস্থিত ছিলেন, তিনি বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন এবং এর সুন্দর একটি সমাধানের উপায় বের করা মানসিকতা নিয়ে বাড়িতে ফিরেন। ফলে রাতে তিনি আযানের বাক্যগুলো স্বপ্নে দেখেন। সকাল বেলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তিনি তার স্বপ্নের কথা বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বপ্নের কথা শুনে বললেন,

«إِنَّ هَذِهِ لَرُؤْيَا حَقٍّ، فَقُمْ مَعَ بِلَالٍ فَإِنَّهُ أَنْدَى وَأَمَدُّ صَوْتًا مِنْكَ، فَأَلْقِ عَلَيْهِ مَا قِيلَ لَكَ، وَلْيُنَادِ بِذَلِكَ» 

“এটি অবশ্যই একটি বাস্তব ও সত্য স্বপ্ন। তুমি আযানের বাক্যগুলো বেলালকে শেখাও, যাতে

 1 সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস, নং ৬৭৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৬২৬; তিরমিযী, হাদীস নং ১৯০।

সে এ কথাগুলো দ্বারা মানুষকে সালাতের জন্য আহ্বান করতে পারে। কারণ, সে তোমার চেয়ে বলিষ্ঠ ও উচ্চ আওয়াজের অধিকারী”। অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর আযান শুনতে পেলেন, তিনি দৌড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ আল্লাহর কসম যিনি আপনাকে সত্যের বাণী দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন, আমিও বেলাল যে বাক্যে আযান দিয়েছে, সে বাক্যগুলো স্বপ্নে দেখেছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্য, এটি অনেকের মাধ্যমেই সাব্যস্ত হল” 

প্রত্যেক সালাতের জন্য একবারই আযান দেওয়ার বিধান রয়েছেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কোনো সালাতের জন্য দুইবার আযান দেওয়ার কোনো বিধান ছিল না। এমনকি জুমু‘আর দিনও একটি আযান ও একটি ইকামতই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের আমল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে বসার পর আযান হত। আযানের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা শেষ করে সালাত আদায় করতেন।
 2 তিরমিযী, হাদীস নং ১৮৯।


আবূ বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার যুগেও এ পদ্ধতিই বহাল ছিল। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে জুমু‘আর দিন একটি আযান বাড়ানো হয়। সময়ের পরিবর্তনের কারণে মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে এবং কর্মব্যস্ততাও বাড়তে থাকে। ফলে মানুষকে জুম‘আর দিন জুমু‘আর সালাতের সময় সম্পর্কে অবগত করার জন্য বর্তমান যুগের প্রথম আযানটি চালু করা হয়। মানুষের প্রয়োজনকে সামনে রেখে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি আযান বাড়ান। এ সময় আলী ইবন আবী তালিব, আব্দুর রহমান ইবন আওফ, যুবাইর ইবন আওয়াম, তালহা ইবন ওবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমসহ বড় বড় সাহাবী উপস্থিত ছিলেন; কিন্তু কেউ উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা এবং দ্বিমত পোষণ করেন নি এতে সাহাবীদের একটি ইজমা‘ বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে বুঝা যায়উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু খেলাফতের পর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এ পদ্ধতিই চালু রয়েছে এ ব্যাপারে পূর্বসূরী কারও কাছ থেকে বিশুদ্ধভাবে এর বিপরীত বা বিরোধিতায় কোনো কিছুই বর্ণিত হয় নি।  

ইমাম বুখারী এ বিষয়ে একটি হাদীস সায়েব ইবন ইয়াযীদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, 

«كَانَ النِّدَاءُ يَوْمَ الجُمُعَةِ أَوَّلُهُ إِذَا جَلَسَ الإِمَامُ عَلَى المِنْبَرِ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَلَمَّا كَانَ عُثْمَانُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَكَثُرَ النَّاسُ زَادَ النِّدَاءَ الثَّالِثَ عَلَى الزَّوْرَاءِ» 

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ ও তার পরবর্তী আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে জুমু‘আর দিন প্রথম আযান ছিল, যখন ইমাম মিম্বারে বসত তখন। তারপর যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগ আসল এবং মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তৃতীয় আযানটি ‘যাওরায়’ (একটি বাজার এলাকার নাম) বাড়ানো হলো” তৃতীয় আযান বলা হলো, কারণ তারা ইকামতকেও একটি আযান মনে করতেন।

হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন তৃতীয় আযানটি প্রচলন করলেন, তখন ঐ যুগের সকল উম্মত তার এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেন। ফলে সমগ্র মুসলিম জাহানে এই আমলটি চালু করা হয়। 

 3 সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯১২।


উল্লিখিত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, জুমু‘আর দিন ওয়াক্ত হওয়ার পর যে আযান দেওয়া হয়, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত যেমন, অযু করার পর রাত ও দিনের যে কোনো সময় দু’রাকাত তাহিয়্যাতুল অযু সালাত আদায় করা বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত। অনুরূপভাবে জুমু‘আর দিনের প্রথম আযানটিও উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দ্বারা সাব্যস্ত সুন্নাত। এ ছাড়াও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলীফাদের মধ্যে একজন অনুকরণীয় বিশিষ্ট খলিফা। তার অনুকরণ করা মুসলিম উম্মাহর ওপর জরুরী। কারণ, আল্লাহর রাসূল তাঁর এ খলীফাদের বিষয়ে বলেন, 

«عليكم بسنتي وسنة الخلفاء المهديين الراشدين فتمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ» 

“তোমরা আমার সুন্নাতের অনুসরণ কর এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের অনুসরণ কর। তার ওপর তোমরা অবিচল থাক এবং তোমরা তাদের সুন্নতকে দাঁত কামড়ে মজবুত করে আঁকড়ে ধর” 

সুতরাং আমলটি যদিও চতুর্থ খলিফা ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে চালু হয়েছে, কিন্তু কোনো সাহাবী কর্তৃক এর বিরোধিতা না করা এবং সকলের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে এ আমলটি সম্পর্কে এ ধরনের কোনো মন্তব্য করা যাবে না যে, ‘এ নিয়ম রসূলের যুগে ছিল না, এটি নব আবিষ্কৃত, আর প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বস্তু বিদ‘আত, সুতরাং তাও বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী’কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত কখনো কোনো গোমরাহীর ওপর একমত হতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

 «إن الله لا يجمع أمتي أو قال أمة محمد صلى الله عليه وسلم على ضلالة»

“আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতকে অথবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতকে গোমরাহীর ওপর একমত হতে দিবেন না”। 

4 আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৪৬৭০।
5 তিরমিযী, হাদীস নং ২১৬৭।

যারা জুমু‘আর দিনের প্রথম আযানের বিরোধিতা করে এবং বিদ‘আত বলে, তারা উম্মতের ইজমা‘-র বিরোধিতা করল। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।



No comments:

Post a Comment

We will tell you the answer. Thank You .

JFPathagar

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Vestibulum rhoncus vehicula tortor, vel cursus elit. Donec nec nisl felis. Pellentesque ultrices sem sit amet eros interdum, id elementum nisi ermentum.Vestibulum rhoncus vehicula tortor, vel cursus elit. Donec nec nisl felis. Pellentesque ultrices sem sit amet eros interdum, id elementum nisi fermentum.




Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *